ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের বিষয়টি অনেকটা এগিয়েছে। তবে এখনো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অমীমাংসিত রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সেখানে বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে কি না।
রোববার জেরুজালেমে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎসের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু জানান, চলতি মাসের শেষ দিকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। তার ভাষায়, কীভাবে পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে ওই বৈঠক হবে ‘গুরুত্বপূর্ণ’।
বিজ্ঞাপন
গত নভেম্বরে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ট্রাম্প তাকে ‘নিকট ভবিষ্যতে’ হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তবে সফরের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
নেতানিয়াহু বলেন, গাজায় হামাসের শাসনের অবসান ঘটানোর বিষয়টিও ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় থাকবে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় মাসে গড়ালেও উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিকবার চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামাসকে শুধু যুদ্ধবিরতি মানলেই হবে না, বরং পরিকল্পনা অনুযায়ী অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজাকে সামরিকমুক্ত করার প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপে গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে ছিল। এই ধাপে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। শেষ যে জিম্মিটির হস্তান্তর এখনো বাকি, তিনি হলেন এক ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। এ প্রসঙ্গে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা তাকে ফিরিয়ে আনব।’
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হামাস গাজার বাকি অংশে নিজেদের অবস্থান আবারো পুনর্গঠিত করেছে বলে দাবি করেন নেতানিয়াহু।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ইসরায়েল আরও পিছু হটবে। একই সঙ্গে গাজায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠন, বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এ লক্ষ্যে ইসরায়েলে একটি বহুজাতিক সমন্বয় কেন্দ্র গঠন করা হলেও এখনো কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়াটি বর্তমানে স্থবির অবস্থায় রয়েছে।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘সময়সীমা কী হবে, কোন বাহিনী আসবে, আন্তর্জাতিক বাহিনী থাকবে কি না বা বিকল্প পথ কী হতে পারে—এগুলোই এখন আলোচনার মূল বিষয়।’
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, গাজা পুনর্গঠনে সহায়তা দিতে জার্মানি প্রস্তুত। তবে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বৈঠক এবং এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বার্লিন তাদের ভূমিকা চূড়ান্ত করবে না। তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপ ‘এখনই’ শুরু হওয়া প্রয়োজন।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, এসব হামলা সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানো কিংবা সশস্ত্র গোষ্ঠীর অবকাঠামো ধ্বংসের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলায় তিনজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হন।
এমআর

