গাজা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর কাছে মানবিক বিপর্যয়ের আরেক প্রতিচ্ছবি। দুই বছর ধরে দখলদা ইসরায়েলের অবিরত হামলায় উপত্যকার ধ্বংসপ্রাপ্ত অসংখ্য ভবন আজও নৃশংসতার নির্মম সাক্ষ্য বহন করছে। সেই ধ্বংসস্তূপের সামনে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) জড়ো হয় হাজারো মানুষ। যুদ্ধের বিভীষিকা, প্রিয়জনের মৃত্যুশোকের মাঝে সেই ভিড়ে দেখা মেলে এক নতুন আশার আলো—একসঙ্গে ৫৪ দম্পতির গণবিয়ে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভাইরাল ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, একে অপরের হাতে হাত রেখে হাঁটছেন দম্পতিরা। কনেরা পরেছেন লাল ফিতায় সজ্জিত ঐতিহ্যবাহী ফিলিস্তিনি সাদা ও লাল পোশাক। বরদের পরনে কালো স্যুট এবং টাই। কনে হাতে ধরেছিলেন লাল, সাদা ও সবুজ রঙের ফিলিস্তিনি পতাকা আর সাজানো ফুলের তোড়া। বররা পাশে হাঁটছিলেন ছোট ছোট পতাকা হাতে। বিয়ের সাজে সজ্জিত এসব নবদম্পতিদের মুখে ছিল উত্তেজনা, আবেগ আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝেও নতুন জীবনের প্রত্যাশা।
বিজ্ঞাপন

গাজায় এই গণবিয়ের আয়োজন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত-ভিত্তিক দাতব্য সংগঠন আল-ফারিস আল-শাহিম ফাউন্ডেশন।
আয়োজকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাত, ঘরবাড়ি হারানো, আর্থিক সংকট ও সামাজিক বিপর্যয়ের কারণে বহু তরুণ-তরুণীর বিয়ে আটকে ছিল। তাদের পাশে দাঁড়াতে এই গণবিয়ের আয়োজন করা হয়, যাতে কোনো পরিবারকে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে না হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষের জীবনে অন্তত একদিনের জন্য হলেও আনন্দ ফিরিয়ে আনাই ছিল আয়োজকদের লক্ষ্য।
সংগঠনটির গণমাধ্যমবিষয়ক কর্মকর্তা শরিফ আল-নাইরাব বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধ্বংসস্তূপের মাঝেই জায়গাটি বেছে নিয়েছি এই বার্তা দেওয়ার জন্য ‘আনন্দের পোশাক’ আবারও শরীরে উঠবে।
বিজ্ঞাপন

এই গণবিয়ের অনুষ্ঠানে নবদম্পতিদের পরিবার, স্থানীয় বিভিন্ন কমিউনিটির সদস্য এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনকে পেছনে রেখে তৈরি করা হয় একটি প্রতীকী মঞ্চ, যেখানে দম্পতিরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। অনেকের চোখে ছিল আনন্দের অশ্রু, আবার কারও মুখে জীবনের প্রতি নতুন করে বিশ্বাস জন্মানোর গল্প।
নবদম্পতিদের একজন বর জানান, যুদ্ধ তাদের জীবনে যা কেড়ে নিয়েছে, আজকের দিনটি যেন সেই শূন্যতার মাঝে একটুখানি আলো ফিরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের চারপাশ ধ্বংস। কিন্তু এই বিয়ে প্রমাণ করে—ভালোবাসা এখনও বেঁচে আছে।’
আরেকজন বলেন, ‘এই সব যুদ্ধ, ধ্বংস আর যা যা আমরা পার করেছি—তারপর আবার আনন্দে ফিরতে পারা, নতুন জীবন শুরু করা; এ এক অতুলনীয় অনুভূতি। আল্লাহর শুকরিয়া, ইনশাল্লাহ সামনে আরও ভালো দিন আসবে।’
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অন্যান্য তরুণ-তরুণীরা বলেন, গাজায় স্বাভাবিক জীবনে ফেরা এখনো অনেক দূরের পথ। তবুও, তারা বিশ্বাস করেন, এমন উদ্যোগ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, সাহস দেয় এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে মানবতার অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে।

প্রসঙ্গত, দুই বছরের বেশি সময় গাজায় বর্বরতা চালিয়ে উপত্যকাটিকে বসবাসের অনুপযোগী করে তুলেছে ইসরায়েল। তবে গত অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রম্পের মধ্যস্ততায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির পর গাজার উপত্যকার বাসিন্দরা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছে।
সূত্র: এএফপি, আরব নিউজ
এমএইচআর

