পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান কারাগারে মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের এই প্রতিষ্ঠাতার তিন বোন অভিযোগ করেছেন, গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইমরান খানের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি এবং তারা ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি জানাতে গিয়ে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারের সামনে পুলিশের নৃশংস হামলার শিকার হয়েছেন।
ইমরান খানের তিন বোন- নরীন খান, আলীমা খান ও উজমা খান অভিযোগ করেছেন, রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বাইরে জড়ো হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েছিলেন তারা। এ সময় বিনা উসকানিতে তাদের ও পিটিআই সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
ইমরানের দল পিটিআই বলেছে, ‘কারাগারে বাইরে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসে থাকা অবস্থায় পুলিশের হামলার শিকার হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তিন বোন ও সমর্থকরা। ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবি তোলাই ছিল তাদের অপরাধ।’ এই ‘নৃশংস’ পুলিশি হামলার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে দলটি।
“𝑨𝒕 𝒕𝒉𝒆 𝒂𝒈𝒆 𝒐𝒇 71, 𝑰 𝒘𝒂𝒔 𝒔𝒆𝒊𝒛𝒆𝒅 𝒃𝒚 𝒎𝒚 𝒉𝒂𝒊𝒓, 𝒕𝒉𝒓𝒐𝒘𝒏 𝒗𝒊𝒐𝒍𝒆𝒏𝒕𝒍𝒚 𝒕𝒐 𝒕𝒉𝒆 𝒈𝒓𝒐𝒖𝒏𝒅, 𝒂𝒏𝒅 𝒅𝒓𝒂𝒈𝒈𝒆𝒅 𝒂𝒄𝒓𝒐𝒔𝒔 𝒕𝒉𝒆 𝒓𝒐𝒂𝒅, 𝒔𝒖𝒔𝒕𝒂𝒊𝒏𝒊𝒏𝒈 𝒗𝒊𝒔𝒊𝒃𝒍𝒆 𝒊𝒏𝒋𝒖𝒓𝒊𝒆𝒔. 𝑶𝒕𝒉𝒆𝒓 𝒘𝒐𝒎𝒆𝒏 𝒘𝒆𝒓𝒆… pic.twitter.com/zrP2D7zoJj
— PTI (@PTIofficial) November 24, 2025
ইমরান খানের বোনদের অভিযোগ
বিজ্ঞাপন
পাঞ্জাব পুলিশের প্রধান উসমান আনোয়ারকে লেখা এক চিঠিতে ইমরান খানের তিন বোন বলেছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে ‘নৃশংস ও পরিকল্পিত’ হামলা চালিয়েছে।
নরীন নিয়াজি খান বলেন, আমরা তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করেছি। আমরা রাস্তা অবরোধ করিনি, জনসাধারণের চলাচলে বাধা দিইনি। এমনকি বেআইনি কোনও কাজ করি নাই। তারপরও কারাগারের সামনের এলাকায় স্ট্রিটলাইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পরপরই পাঞ্জাব পুলিশের সদস্যরা আমাদের ওপর নৃশংস ও পরিকল্পিত হামলা চালান।
তিনি বলেন, ‘৭১ বছর বয়সে আমাকে চুল ধরে টেনে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। রাস্তার ওপর ফেলে মারধর করেছে পুলিশ। এতে দৃশ্যমান আঘাতের সম্মুখীন হয়েছি আমি।’
কারাগারের বাইরে থাকা অন্যান্য নারী সমর্থককেও পুলিশ মারধর করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় উল্লেখ করে নরীন খান আরও বলেন, ‘পুলিশের আচরণ তিন বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারী নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত নির্বিচার বলপ্রয়োগের অংশ ছিল, যা উদ্বেগজনক দায়মুক্তির প্রতিফলন।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের আচরণ সম্পূর্ণরূপে অপরাধমূলক, অবৈধ, নৈতিকভাবে নিন্দনীয় ছিল না এবং গণতান্ত্রিক সমাজে যেকোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মৌলিক কর্তব্যের সরাসরি পরিপন্থী ছিল না। অবিলম্বে এই নৃশংস হামলার সঙ্গে জড়িত সকল পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ (আইজিপি পাঞ্জাব) করুন।’
ইমরান খানের কারাদণ্ড
একাধিক মামলায় অভিযুক্ত পিটিআইয়ের প্রধান ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তার সঙ্গে সাক্ষাতে অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটির সরকার। এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুর ভুয়া খবরও ছড়িয়েছে।
পিটিআইয়ের দাবি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে একেবারে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় একক কক্ষে বন্দি করে রেখেছে সরকার।
ইমরান খানের একজন আইনজীবী খালিদ ইউসুফ চৌধুরী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, বইসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এমনকি আইনজীবীদের প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে জঙ্গলের শাসন চলে; যে পশুকে শাসন করে, কেবল তারই অধিকার আছে। অন্য কারও কোনও অধিকার নেই।’
এমনকি খাইবার–পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদিকেও ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। তিনি টানা সাতবার কারাগারে গিয়ে সাক্ষাতের চেষ্টা করেছেন। তবে প্রতিবারই কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি
এমএইচআর

