বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ট্রাম্পের আলটিমেটামে ‘কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে’ ইউক্রেন: জেলেনস্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০৩ এএম

শেয়ার করুন:

ট্রাম্পের আলটিমেটামে ‘কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে’ ইউক্রেন: জেলেনস্কি
ভলোদিমির জেলেনস্কি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে এক সংকটজনক পরিস্থিতিতে পড়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনকে হয় মর্যাদা-স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি, নতুবা ওয়াশিংটনের সমর্থন হারানোর আশঙ্কা-এ দুটি কঠিন পথের একটিকে বেছে নিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সূত্র: আল জাজিরা।

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে টেলিভিশনে বার্তায় দেশর নাগরিকদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘এটা আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তগুলোর একটি…। এখন ইউক্রেন খুব কঠিন এক সিদ্ধান্তের মুখে। মর্যাদা হারানো বা গুরুত্বপূর্ণ মিত্রকে হারানোর ঝুঁকি।’


বিজ্ঞাপন


ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘আমি ২৪ ঘণ্টা লড়ে যাব, যাতে এই পরিকল্পনার অন্তত দুটি বিষয় বাদ না পড়ে। ইউক্রেনের মর্যাদা ও স্বাধীনতা।’

ট্রাম্পের দেওয়া সময়সীমা

প্রায় চার বছর আগে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শেষ করতে ২৮ দফার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রস্তাবে সম্মতির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়ই ‘উপযুক্ত’।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, পরিকল্পনায় রাজি করাতে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য ও অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই প্রস্তাবে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের দাবিই প্রতিফলিত হয়েছে-ইউক্রেনকে অতিরিক্ত এলাকা ছেড়ে দেওয়া, সেনাবাহিনী ছোট করা এবং ন্যাটোতে যোগদানে নিষেধাজ্ঞা। বদলে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে এবং মস্কোকে আবার জি‘৮’এ ফেরানো হবে।

মস্কোর প্রতিক্রিয়া

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ‘আলাস্কা বৈঠকের আগের আলোচনার আধুনিক সংস্করণ”। তিনি জানান, পরিকল্পনাটি “চূড়ান্ত শান্তিচুক্তির ভিত্তি হতে পারে”, তবে এ নিয়ে এখনো “গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়নি”।

পুতিন বলেন, “ইউক্রেন এতে রাজি নয়, আর তাদের ইউরোপীয় মিত্ররাও এখনো মনে করছে রাশিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে হারানো সম্ভব।”

চাপ বাড়ছে যুদ্ধে

এমন সময় ইউক্রেনের ভেতরেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় টারনোপিলে একটি আবাসিক ভবনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত ও ৯৪ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে ক্রেমলিন দাবি করেছে, খারকিভের ওস্কিল নদীর পূর্ব তীরে প্রায় ৫ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা আটকা পড়েছে। কিয়েভ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

পূর্বের পোকরোভস্ক ও মিরনোহ্রাদ শহর দখলে রাশিয়ার তীব্র লড়াই চলছে। দক্ষিণের জাপোরিঝঝিয়াতেও মস্কো অগ্রসর হচ্ছে।

ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রগতি জেলেনস্কিকে বুঝিয়ে দেবে যে ‘এখনই আলোচনায় বসা পরে বসার চেয়ে অনেক ভালো।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জিম টাউনসেন্ড বলেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা কমছে, যা কিয়েভকে চুক্তির দিকে ঠেলে দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র বলে’ আপনারা যদি রাজি না হন, আমরা আর সহায়তা দেব না তাহলে জেলেনস্কির ওপর চুক্তি গ্রহণের প্রবল চাপ তৈরি হবে।’

ইউরোপের সতর্কতা

মার্কিন পরিকল্পনা নিয়ে ইউরোপকে আগাম জানানো হয়নি। শুক্রবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার ও জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্জ জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও ইউক্রেনকে ‘অটল সমর্থনের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ইইউ–এর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস বলেন, “আমরা সবাই যুদ্ধের শেষ চাই, কিন্তু কীভাবে শেষ হবে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়ার কোনো অধিকার নেই ইউক্রেনের কাছ থেকে কোনো ছাড় আদায় করার।”

বার্লিন থেকে আল জাজিরার ডমিনিক কেইন জানান, ইউরোপ সমর্থনে ঐক্য দেখালেও কোন কোন ছাড় গ্রহণযোগ্য হবে তা এখনো বড় প্রশ্ন। তবে তার মতে, শেষ পর্যন্ত মস্কো, কিয়েভ ও ওয়াশিংটনে এই তিন রাজধানীতে সিদ্ধান্ত হবে।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর