প্রশান্ত মহাসাগরে সন্দেহভাজন চারটি মাদকবাহী নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সোমবার এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ।
মেক্সিকোর নৌবাহিনী জানিয়েছে, তারা এখনও একমাত্র জীবিত ব্যক্তিকে খুঁজছে। তিনি প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় শহর আকাপুলকো থেকে প্রায় ৪০০ মাইল (৬৪৩ কিলোমিটার) দূরে রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রের মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে চালানো হলেও, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা উঠেছে। আইন বিশেষজ্ঞরা হামলাগুলোর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যেরাও প্রেসিডেন্টের এই নির্দেশের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এই হামলার সঙ্গে একমত নই।’
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করতে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা চাই আন্তর্জাতিক সব চুক্তি সম্মানিত হোক।’
মার্কিন অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৭ জন নিহত হয়েছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কলম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলার সম্পর্কও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
এক্সে (আগের নাম টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা সচিব হেগসেথ বলেন, সোমবারের হামলায় যেসব নৌযান ধ্বংস করা হয়েছে, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার নজরে ছিল। সেগুলো পরিচিত মাদক পরিবহন রুটে চলাচল করছিল এবং মাদক বহন করছিল।
তিনি বলেন, প্রথম হামলায় আটজন, পরবর্তী দুই হামলায় যথাক্রমে চার ও তিনজন নিহত হয়েছেন। একজন জীবিত রয়েছেন।
হেগসেথ জানান, উদ্ধার তৎপরতার দায়িত্ব মেক্সিকোর কর্তৃপক্ষ নিয়েছে। তবে জীবিত ব্যক্তির অবস্থা বা অবস্থান এখনও জানা যায়নি।
মেক্সিকোর নৌবাহিনী জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযানে তারা একটি টহল নৌকা ও একটি বিমান পাঠিয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব তার পোস্টে এমন কিছু ভিডিওও প্রকাশ করেন, যেখানে দেখা যায়-বিস্ফোরণের পর কয়েকটি নৌযানে আগুন ধরে গেছে।
তিনি লেখেন, ‘দুই দশক আমরা অন্য দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করেছি। এখন নিজেদের রক্ষার সময়।’
হেগসেথ বলেন, এ পর্যন্ত অন্তত চারটি হামলা প্রশান্ত মহাসাগরে হয়েছে। বাকি হামলাগুলো হয়েছে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌযানে হামলার আইনি ক্ষমতা তার আছে। তবে অভিযান স্থলভাগে সম্প্রসারিত হলে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, ‘স্থলভিত্তিক লক্ষ্যেও হামলার জন্য আমি পুরোপুরি প্রস্তুত।’ বিশ্লেষকদের মতে, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
কলম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলার সরকার এবং আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে এই হামলাকে ‘অবৈধ’ ও ‘অতিরিক্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এমআর

