সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

অরুণাচলের কাছে ৩৬টি বিমান শেল্টার নির্মাণ চীনের, উদ্বিগ্ন ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

india
ভ্যান্টর স্যাটেলাইট ইমেজ।

তিব্বতের লুনজে বিমানঘাঁটিতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমান শেল্টার, নতুন প্রশাসনিক ব্লকসহ আরও স্থাপনা নির্মাণ সম্পন্ন করেছে চীন। এটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশে ভারত-চীন সীমানা ‘ম্যাকমোহন লাইনের’ প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত, যা ভারতের নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুসারে, অরুণাচলের কৌশলগত শহর তাওয়াং থেকে প্রায় ১০৭ কিলোমিটার দূরে লুনজেতে নতুন শক্তিশালী শেল্টারগুলো নির্মাণের ফলে যুদ্ধবিমান এবং প্রচুর ড্রোন মোতায়েনের  সুযোগ পাবে চীন। এতে অরুণাচল প্রদেশ এবং আসাম জুড়ে নিজস্ব বিমানঘাঁটি থেকে যেকোনও বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া জানানোর সময়ও কমে যাবে ভারতের বিমানবাহিনীর। 


বিজ্ঞাপন


ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিএস ধানোয়া এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘লুনজেতে ৩৬টি শক্তিশালী বিমান শেল্টার নির্মাণ স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, সম্ভাব্য যেকোনো উত্তেজনার সময় চীনা সেনাবাহিনীর সমর্থনে পরিচালিত কৌশলগত যুদ্ধ বিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টারগুলো ওই ঘাঁটিতেই অবস্থান করবে।’

ইতোমধ্যেই চীন ওই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন সুড়ঙ্গে অস্ত্র ও জ্বালানি মজুত করেছে উল্লেখ করে ধানোয়া আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে ডোকলাম ঘটনার সময় আমি আমার কর্মীদের বলেছিলাম, তিব্বতে চীনা বিমানবাহিনীর সমস্যা বিমান নয়, বরং মোতায়েন। আমি তখনই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম, যেদিন তারা তিব্বতে তাদের বিমানঘাঁটিতে শক্তিশালী বিমান শেল্টার তৈরি শুরু করবে, সেদিনই তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবে। এতে করে তিব্বতে তাদের (চীনের) মূল দুর্বলতা দূর হবে।'

ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাবেক উপ-প্রধান এয়ার মার্শাল অনিল খোসলা বলেন, এসব বিমানঘাঁটির নির্মাণ ও উন্নয়ন ভবিষ্যতে চীনের যুদ্ধ পরিকল্পনাকে সহায়তা করতে পারে। এটি ভারতের জন্য ‌‌‘গুরুতর কৌশলগত হুমকি’ হিসেবে দেখা উচিত। বিশেষ করে ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে।

তিনি বলেন, ‘লুনজেতে এসব উন্নয়ন আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গভীর প্রভাব ফেলবে। ৩৬টি শক্তিশালী শেল্টার নির্মাণের মাধ্যমে চীন নিজের অস্ত্রভাণ্ডার মজুত রাখার সুযোগ তৈরি করবে। একই সঙ্গে বৃহত্তর হামলা মোকাবেলা এবং উঁচু অঞ্চলে ধারাবাহিক অভিযান চালানোর সক্ষমতাও বৃদ্ধি করবে।’


বিজ্ঞাপন


এয়ার মার্শাল খোসলা আরও বলেন, এই শক্তিশালী শেল্টারগুলো নির্ভুলভাবে পরিচালিত যুদ্ধাস্ত্রগুলোকে ভারতীয় বিমান হামলা বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে রক্ষা করবে। এর ফলে সংঘাতের শুরুতে ঘাঁটিটি ধ্বংস করা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।

তিনি বলেন, তিংরি, লুনজে ও বুরাংয়ের মতো বিমানঘাঁটিগুলো নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) খুব কাছাকাছি; প্রায় ৫০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। এই নৈকট্যের কারণে সীমান্ত উত্তেজনা দেখা দিলে দ্রুত বিমান মোতায়েন করা সম্ভব; যা অরুণাচল, সিকিম, উত্তরাখণ্ড ও লাদাখে ভারতের অবস্থানের ওপর নজরদারি চালানো সহজ হবে। 

উল্লেখ্য, এমন এক সময়ে এই খবর সামনে এলো যখন- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের ওপর আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বৈরিতা পাশ কাটিয়ে নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক উন্নয়ন হচ্ছে। বিশেষ করে গত আগস্ট মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাত বছর পর চীন সফর করেন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপরই চার বছর পর দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সরাসরি বিমান চলাচলসহ, বাণিজ্য সম্প্রসারণে একমত হয়েছে। 

সূত্র: এনডিটিভি

এমএইচআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর