রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘পুলিশ ৪ বার ধর্ষণ করেছে’, হাতে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা চিকিৎসকের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

‘পুলিশ ৪ বার ধর্ষণ করেছে’, হাতে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা চিকিৎসকের

ভারতের মহারাষ্ট্রের সাতারার একটি জেলা হাসপাতালে কর্মরত এক নারী চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। মারা যাওয়ার আগে নিজের হাতের তালুতে লেখা একটি সুইসাইড নোটে পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) তাকে পাঁচ মাসে চারবার ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করে গেছেন তিনি। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গেছে মহারাষ্ট্রে। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাও শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে সাতরার ফালতানের একটি হোটেলের কক্ষ থেকে ওই নারী চিকিৎসকের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ফালতানের সাব-ডিস্ট্রিক্ট হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


পুলিশ জানিয়েছে, আত্মহত্যা করার আগে ভুক্তভোগী চিকিৎসক নিজের বাম হাতের তালুতে মোট দুইজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হেনস্থার অভিযোগ লিখে গিয়েছেন। এর মধ্যে একজন এসআই গোপাল বাদনে, যার বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এবং বলেছেন তার ক্রমাগত হয়রানির কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যজন পুলিশ অফিসার প্রশান্ত বাঙ্কারম তার বিরুদ্ধেও মানসিক হয়রানির অভিযোগ করেছেন ওই চিকিৎসক।

সুসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, ‘পুলিশ ইন্সপেক্টর গোপাল বাদনেই আমার মৃত্যুর কারণ। সে আমাকে চারবার ধর্ষণ করেছে। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে সে আমাকে ধর্ষণ, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেছে।’
  
জানা গেছে, ১৯ জুন ফালতানের মহকুমা অফিসের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) কে লেখা একটি চিঠিতে একই অভিযোগ তুলেছিলেন। 

আত্মহত্যার কয়েক মাস আগে ডিএসপির কাছে লেখা ওই চিঠিতে তিনি ফালতান গ্রামীণ পুলিশ বিভাগের দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছিলেন। 

চিঠিতে তিনি বাদনে, সাবডিভিশনাল পুলিশ ইন্সপেক্টর পাতিল এবং সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর লাডপুত্রের নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছিলেন ‘তিনি চরম চাপের মধ্যে আছেন, তাই এই গুরুতর বিষয়টি তদন্ত করে দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছেন’।


বিজ্ঞাপন


সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশের নির্দেশে অভিযুক্ত এসআই গোপাল বাদনেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। 

সাতারা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে একটি মামলা দায়ের করেছি, এবং মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। আমরা মৃতের হাতে লেখা সুইসাইড নোটে উল্লেখিত অভিযোগগুলোর তদন্ত করছি।’

এদিকে শুক্রবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত হয় মহারাষ্ট্রজুড়ে। রাজ্য কংগ্রেস নেতা বিজয় নামদেবরাও ওয়াদেত্তিওয়ার সুইসাইড নোট নিয়ে ক্ষমতাসীন মহাযুতি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। 

এক এক্স বার্তায় তিনি বলেন, ‘রক্ষকই যখন ভক্ষক হয়ে ওঠে! পুলিশের কর্তব্য হলো রক্ষা করা, কিন্তু যদি তারা নিজেরাই একজন নারী ডাক্তারকে শোষণ করে, তাহলে ন্যায়বিচার কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? এই মেয়েটি আগে অভিযোগ দায়ের করার সময় কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? মহাযুতি সরকার বারবার পুলিশকে রক্ষা করছে, যার ফলে পুলিশি অত্যাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই মামলায় শুধুমাত্র তদন্তের নির্দেশ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। ওই পুলিশ আধিকারিকদের চাকরি থেকে বরখাস্ত উচিত, অন্যথায় তারা তদন্তপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করবেন। কেন তার আগের অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়নি? যারা এটি উপেক্ষা করেছে এবং যারা এই পুলিশ অফিসারদের রক্ষা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া

এমএইচআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর