পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে ইরানের ওপর আরোপ করা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা স্থায়ীভাবে তুলে নেওয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
এর ফলে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান হওয়ায় ইরানের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। তেহরান বলছে, এ সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট’।
বিজ্ঞাপন
ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার পক্ষে ভোট দিয়েছে রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান ও আলজেরিয়া।
আর ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, পানামা ও সোমালিয়া। এ তথ্য ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার। গায়ানা ও দক্ষিণ কোরিয়া ভোট থেকে বিরত ছিল।
এই ভোটের আগে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি আগস্টের শেষ দিকে ৩০ দিনের প্রক্রিয়া শুরু করে, যেখানে তারা ইরানের ওপর তাদের দাবি পূরণ না করলে নিষেধাজ্ঞা পুনঃপ্রবর্তনের চেষ্টা করেছিল।
শুক্রবারের অধিবেশনে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধি ও জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ‘আজকের সিদ্ধান্ত হঠাৎ, অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধ। ইরান এটি মানতে বাধ্য নয়। এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং নিরাপত্তা পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।” তিনি আরও বলেন, “ই-থ্রি দেশগুলো আলোচনার সুযোগ নষ্ট করেছে এবং শুধু উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।”
বিজ্ঞাপন
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খাতিবজাদেহ বলেছেন, ‘ইউরোপীয়রা পক্ষপাতমূলক এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে।’
ই-থ্রি দেশগুলো দাবি করেছে, ইরান তাদের পারমাণবিক অঙ্গীকার লঙ্ঘন করছে। বিশেষ করে অনুমোদিত স্তরের চেয়ে ৪০ গুণ বেশি ইউরেনিয়াম মজুদ করা হয়েছে। জুনে জাতিসংঘের পারমাণবিক তত্ত্বাবধায়ক বোর্ডও জানিয়েছে, ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিরাপত্তার মান মেনে চলছে না।
ইরান বারবার বলেছে যে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না, তবে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের অধিকার সংরক্ষণ করছে।
জেসিপিওএ চুক্তি অনুযায়ী, তেহরান পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে ২০১৮ সালে ওই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে বের হয়ে একপক্ষীয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা পুনঃপ্রবর্তন করেছিলেন।
এ মাসের শুরুতে ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। ইরাভানি বলেন, ‘ই-থ্রি দেশগুলো চুক্তির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি, বরং ওয়াশিংটনের নির্দেশ অনুসরণ করেছে। তাদের রীতির সঙ্গে কার্যকলাপের বৈপরীত্য প্রমাণ করে, তাদের আসল উদ্দেশ্য কূটনীতি নয়, উত্তেজনা সৃষ্টি করা।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক আলোচনার জটিলতা বাড়াবে এবং ইরানের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে। তবে শেষ মুহূর্তে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা এখনও আছে।
এমআর

