সম্প্রতি কাতারে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতাদের নির্মূল করতে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে তেলআবিব। তবে হামলাটি ঘটে এমন এক সময়ে, যখন কাতার যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ মিত্র হিসেবে দীর্ঘকালীন শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল। তেলআবিবি ও ওয়াশিংটনের চাওয়ায় দোহা তাদের আতিথেয়তা দিয়েছিল। তবুও এই হামলা ঘটায় পুরো অঞ্চলে এক ধরনের ভীতি ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
এই হামলার ফলে আরব দেশগুলো বুঝতে পেরেছে, ইসরায়েলের সামরিক ক্ষমতার সীমা নেই। এমনকি যারা ইসরায়েলের কার্যক্রমের বিরোধিতা করে না, তারাও এখন নিরাপদ নয়। ইসরায়েল বার্তা দিয়েছে, হামাসের জন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। যদিও ইরানে হামাস না থাকলেও দেশটিতে ভয়াবহ হামলা চালায় তেলআবিব। ফলে বুঝাই যায়, ইসলামী উদীয়মান শক্তিগুলোই টার্গেট তাদের। যদিও এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন, তারা যেন হামাসকে আশ্রয় না দেয়।
বিজ্ঞাপন
কাতারে হামলায় ইসরায়েল তাদের মূল লক্ষ্য হাসিল করতে পারেনি, অর্থাৎ হামাসের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু কাতারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে হামলা চালিয়ে তারা ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। এই ঘটনা তুরস্ক, মিসরসহ অন্য আরব দেশগুলোতেও হামলার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়া কিংবা ভৌগোলিক দূরত্ব কোনোটাই এখন হামলা থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লেইটার ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, ‘যদি এবার তারা হামাস নেতাদের ধরতে না পারে, তাহলে পরবর্তী বার তা করবে’। ফলে বুঝাই যায়, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল অন্য আরব দেশগুলোকেও সতর্ক করছে, বিশেষ করে যারা আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হয়েছে তাদের। অনেকেই মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে তারা চুক্তি থেকে সরে আসতে পারে।
এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গেও চাপ তৈরি হয়েছে। হামাসের নেতারা গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন, কিন্তু এই হামলা সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেছে। ইসরায়েল কাতারের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা শেষ করার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়াকে হত্যা করার চেষ্টাও ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
এই পদক্ষেপ কূটনীতি ও শান্তি প্রক্রিয়াকে ভঙ্গ করতে পারে। এটি নেতানিয়াহুর যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার পথ খুলে দিতে পারে, যার মূল লক্ষ্য হলো গাজা দখল ও হামাসকে নির্মূল করা।
বিজ্ঞাপন
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এটিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থবিরোধী একতরফা হামলা বলে উল্লেখ করেন। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট বলেন, ট্রাম্প বলেছেন, ভবিষ্যতে কাতারে এ ধরনের হামলা আর হবে না।
তবে এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বড় একটি প্রশ্নের মুখে ফেলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের সুরক্ষা দিতে না পারে, তাহলে ওই অঞ্চলের সামরিক ঘাঁটিগুলোর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যর্থ হলে আর কার কাছে আস্থা রাখা যায়? নেতানিয়াহু যদি ট্রাম্পের অনুমোদন ছাড়াই হামলা চালায়, তাহলে ভবিষ্যতে হামলার নিশ্চয়তা কে দিতে পারে?
এইউ

