শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভারতে ‘মগজ-খেকো অ্যামিবা’ সংক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

ভারতে ‘মগজ-খেকো অ্যামিবা’ সংক্রমণে ১৯ জনের মৃত্যু 

ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালায় ছড়িয়ে পড়েছে ‘মগজ-খেকো’ অণুজীব অ্যামিবার সংক্রমণ, যা মানুষের মস্তিষ্কে ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটায়। চলতি বছর রাজ্যটিতে প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিংগোএনসেফালাইটিস (পিএএম) নামক এই মারণ রোগ আক্রান্ত ৬১ জনের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটেছে গত কয়েক সপ্তাহে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন, কেরালা বর্তমানে এক গুরুতর জনস্বাস্থ্য সংকটের শিকার। আগে কোঝিকোড ও মালাপ্পুরম জেলার কিছু ক্লাস্টারে সংক্রমণ শনাক্ত হলেও এবার রাজ্যের নানা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে বিচ্ছিন্ন সংক্রমণ। আক্রান্তদের মধ্যে তিন মাস বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৯১ বছরের বৃদ্ধও রয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি বলেন, ‘গত বছর যেখানে একক পানির উৎস থেকে সংক্রমণের ঘটনা মিলেছিল, এবার আমরা শুধু বিচ্ছিন্ন উৎস পাচ্ছি। এতে আমাদের এ বিষয়ে অনুসন্ধান আরও জটিল হয়ে পড়েছে।’

পিএএম কী? কীভাবে ছড়ায় সংক্রমণ?

কেরালা সরকারের এক নথি অনুযায়ী, পিএএম কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এর আক্রমণে মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস হওয়ার ফলে মারাত্মক ফোলা ও মৃত্যুর কারণ হয়। সাধারণত একেবারে সুস্থ শিশু, কিশোর-কিশোরী ও তরুণদের মধ্যেই এটি বেশি দেখা যায়।


বিজ্ঞাপন


নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গরম, বিশেষ করে ‘স্থির পানিই’ মগজ-খেকো অ্যামিবার প্রধান বাহক। সংক্রমণ ঘটে মূলত নাকের মাধ্যমে, অলফ্যাক্টরি মিউকোসা ও ক্রিব্রিফর্ম প্লেট হয়ে। তবে দূষিত পানি পান করলে এই রোগ হয় না। অর্থাৎ, যারা ওই পানিতে সাঁতার কাটে, ডুব দেয় বা গোসল করে, তারাই ঝুঁকিতে থাকে।

এতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন এই রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ও অতিরিক্ত গরমে বিনোদনমূলকভাবে বেশি সময় পানিতে কাটাচ্ছে মানুষ। ফলে এ অণুজীবের সঙ্গে সংস্পর্শ বাড়ছে। তবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রমণ ছড়ায় না।

পিএএম সংক্রমণের লক্ষণ কী কী?

এই রোগের মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি, কারণ সময়মতো শনাক্ত করা কঠিন। প্রাথমিক লক্ষণগুলো ব্যাকটেরিয়াজনিত মেনিনজাইটিসের মতো, যেমন- তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব ও বমি। 

নথিতে বলা হয়েছে, ‘বেশিরভাগ রোগী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের জড়িত থাকার লক্ষণ বা লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। উষ্ণ মাসগুলোতে সাধারণত স্থির ও সাধু পানিতে সাঁতার কাটা, ডাইভিং এবং গোসলের অভ্যস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হতে বেশি দেখা যায়। সাধারণত ১ থেকে ৯ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয় ও কয়েক ঘণ্টা থেকে এক-দুই দিনের মধ্যে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

এতে আরও বলা হয়েছে, মস্তিষ্কে প্রবেশের পর নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি খুব দ্রুত প্রতিরোধব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে। এতে কয়েক দিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটে।

চিকিৎসা কীভাবে হয়?

নথিতে বলা হয়েছে, গত ছয় দশকে পিএএম থেকে বেঁচে যাওয়া রোগীদের প্রায় সবাইকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা হয়েছিল, যা প্রমাণ করে দ্রুত শনাক্তকরণ ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগ প্রাণরক্ষাকারী হতে পারে।
 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জোর দিয়ে বলেছেন, প্রাথমিক শনাক্তকরণই এই রোগ থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, রোগটির বিরলতা, দ্রুত মৃত্যুঝুঁকি ও দেরিতে শনাক্তকরণের কারণে কার্যকর ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কঠিন হয়ে উঠছে। তবে তত্ত্বগতভাবে, সর্বোত্তম ওষুধের পদ্ধতিতে একটি অ্যামিবিসাইডাল ড্রাগ (অথবা ওষুধের সংমিশ্রণ) অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যার ইন ভিট্রো কার্যকলাপ ভালো এবং রক্ত-মস্তিষ্কের বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম।

কেরালা সরকার রাজ্যের জনগণকে জমে থাকা পানির সংস্পর্শে আসার পর যদি পিএএম সংক্রমণের মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসার পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে প্রথমবার কেরালায় পিএএম শনাক্ত হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত মাত্র আট জনের এতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে গত বছর এই সংখ্যা হঠাৎ বেড় ৩৬ জনে পৌঁছায়, যার মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়। আর চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসেই ৬১ জন আক্রান্ত এবং ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। 

সূত্র: এনডিটিভি

এমএইচআর

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর