বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

গাজায় ভয়াবহ হামলা, শহর ছাড়ছেন ফিলিস্তিনিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৮ এএম

শেয়ার করুন:

গাজায় ভয়াবহ হামলা, শহর ছাড়ছেন ফিলিস্তিনিরা
গাজায় ভয়াবহ হামলা, শহর ছাড়ছেন ফিলিস্তিনিরা

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা ও ভয়াবহ হামলায় আবারও আগুনে ঘি পড়েছে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে। অবরুদ্ধ এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটি ছেড়ে পালাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বোমা, গুলিবর্ষণ, রোবট হামলা আর ট্যাঙ্কের সামনে পড়া আতঙ্কে উত্তর দিক থেকে মানুষ ছুটে যাচ্ছেন দক্ষিণের দিকে। তবে সেখানে পৌঁছেও কেউ নিশ্চিত নয়, জীবন নিয়ে টিকে থাকা যাবে কি না।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই পরিস্থিতির কথা জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।


বিজ্ঞাপন


সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত দুই বছরে গাজা সিটিতে এত বড় হামলা আর হয়নি। পুরো শহর জুড়ে চলছে বোমাবর্ষণ। ধ্বংসস্তূপের ভেতর দিয়ে কেউ হাঁটছে, কেউ আসবাবপত্র বোঝাই ভ্যানে, আবার কেউ বা গাধার গাড়িতে করে পালাচ্ছেন। কারও হাতে কেবল ব্যাগভর্তি কাপড়চোপড়। চারপাশে ধোঁয়া, ধ্বংস, আর আতঙ্ক।

প্রথমদিকে অনেকে বলেছিলেন, তারা শহর ছাড়বেন না। ইসরায়েলের দখল পরিকল্পনার মুখেও টিকে থাকবেন। কিন্তু যখন টানা বিমান হামলায় ভবনগুলো গুঁড়িয়ে যেতে শুরু করল, তখন অনেকেই আর থাকতে পারেননি। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা দক্ষিণে পালিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু সেখানেও আশ্রয়ের নিশ্চয়তা নেই। কারণ রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে বিতাড়িত মানুষে ভরা দক্ষিণের ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পগুলোতেও হামলা চলছে। সবচেয়ে সংকটময় অবস্থা আল-মাওয়াসি শরণার্থী ক্যাম্পে। সেখানে হামলা চালানোর পর, হতাশ হয়ে কমপক্ষে ১৫ হাজার মানুষ আবার গাজা সিটির দিকেই ফিরেছেন।

মঙ্গলবার একদিনেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯১ জন। উপকূলীয় সড়কে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানুষের গাড়িতেও বোমা ফেলা হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে ১৭টি আবাসিক ভবন। বিমান হামলা হয়েছে পূর্ব গাজার আইবাকি মসজিদে।


বিজ্ঞাপন


ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘গাজা জ্বলছে’।

আর একই দিনে গাজার আকাশে উড়েছে বোমা বহনকারী ড্রোন ও বিস্ফোরকভর্তি রোবট। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, একবারে ১৫টি রোবট মোতায়েন করা হয়েছে, যেগুলোর প্রতিটি একাই ২০টির মতো বাড়ি ধ্বংস করতে পারে।

এই হামলার মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এটিকে ‘ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়েছেন। জাতিসংঘের একটি তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যে চলমান এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ বলেও উল্লেখ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইসরায়েলের নিন্দা আরও জোরালো হচ্ছে।

গাজা সিটিতে ঠিক কত মানুষ এখনো রয়ে গেছেন, তা নিয়ে রয়েছে মতভেদ। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা দাবি করেন, গাজা সিটি ছেড়েছেন ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। অন্যদিকে, গাজার সরকারি গণমাধ্যম জানায়, শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিম অংশে সমান সংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন, এবং ১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ পুরোপুরি শহর ত্যাগ করেছেন।

মঙ্গলবার ভোর থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত গাজাজুড়ে ১০৬ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, এমন তথ্য জানিয়েছে মেডিকেল সূত্র।

সেনাবাহিনী এক ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে তারা এখন গাজা সিটির ভেতরেও অগ্রসর হচ্ছে। এক মুখপাত্র বলেন, শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। যত সময়ই লাগুক, অভিযান চলবে।

ফিলিস্তিনিরা বলছেন, যুদ্ধ নয়, এটা গণহত্যার পরিকল্পিত বাস্তবায়ন। কারণ বেসামরিক মানুষদের পালানোর কোনো নিরাপদ পথ নেই। দক্ষিণে গেলে বোমা, উত্তরে থাকলে ধ্বংস। কেউ জানে না, এ জীবন নিয়ে আর একটিবার ফিরে আসা সম্ভব হবে কি না।

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর