বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নেপালে সরকার গঠনে জটিলতা: প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সুশীলা কার্কির মতবিরোধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

নেপালে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হচ্ছেন সুশীলা কার্কী, তবে আছে শর্ত

নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন জেন-জি প্রস্তাবিত প্রার্থী সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি, তা প্রায় নিশ্চিত। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনে দেশটির প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেলের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। মূলত সংসদ ভাঙার ক্ষমতা কার হাতে থাকবে—এই প্রশ্নে দুজনের মধ্যে মতবিরোধ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগে দেরি হচ্ছে।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নেপালি সংবাদমাধ্যম সেতুপাটি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট পাউডেল ইতিমধ্যেই কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই তাকে সংসদ ভাঙা ও নির্বাচন তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। 

পাউডেল জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার ওই সিদ্ধান্ত তিনি অনুমোদন দেবেন এবং নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে তিনি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সম্মতি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি আরও জানিয়েছেন, কার্কিকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার দরকার নেই; তিনি সংবিধানের ধারা ৬১ (৪) অনুযায়ী সরাসরি তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। কার্কির নিয়োগপত্রে লেখা থাকবে ‘রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ধারক ও রক্ষাকর্তা হিসেবে কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেছেন।’  

দেশটির সংবিধানের ধারা ৬১ (৪) অনুসারে প্রেসিডেন্টের প্রধান দায়িত্বই হলো সংবিধানের পালন ও সংরক্ষণ।


বিজ্ঞাপন


এদিকে প্রেসিডেন্ট পাউডেলের এই প্রস্তাবে রাজি নন সুশীলা কার্কি। তিনি বলেন, ‘আগে প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙে দেবেন, তারপর আমি প্রধানমন্ত্রী হবো।’

কিন্তু পাউডেল স্পষ্ট করেছেন সংবিধান অনুসারে, তিনি একতরফাভাবে সংসদ ভাঙতে পারবেন না—এটি কেবল প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে বৈধ হয়। 

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে যদি আমি এটি ভেঙে দেই, তবেই এটি বৈধতা পাবে। প্রেসিডেন্ট নিজে থেকে সংসদ ভেঙে দেন, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট ভবিষ্যতে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারে।’ 

রাষ্ট্রপতি আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি নিজে সংসদ ভাঙার পক্ষে নই। অতীতে বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারীও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সংসদ ভেঙেছিলেন, তখনও আমি বলেছিলাম এভাবে করা ঠিক নয়। আমি আজীবন সংসদের পক্ষে ছিলাম, এর ভাঙনের কলঙ্ক নিতে চাই না।’

দুই জনের এই অনড় অবস্থানের কারণে কার্কি প্রধানমন্ত্রী হতে দেরি হচ্ছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কার্কি কী করবেন তা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। যদি কার্কি প্রধানমন্ত্রী হন, তার সরকারের মূল কাজ হবে নির্বাচন আয়োজন। পাশাপাশি, ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর জেনজি প্রজন্মের আন্দোলনের সময়কার ঘটনাগুলো তদন্ত, দুর্নীতি ও নেতাদের সম্পত্তি খতিয়ে দেখা। এসব কাজও করার পরিকল্পনা রয়েছে।

গত রাতেই রাষ্ট্রপতি পাউডেল সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগ্দেল ও সাবেক প্রধান বিচারপতি কার্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সাথেও বৈঠক ও ফোনে কথা বলেছেন। শুরুতে দলগুলো সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেই নতুন প্রধানমন্ত্রী চাইছিল, কিন্তু সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি তা অস্বীকার করলে তারা বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া জেন-জি প্রজন্মের এক প্রতিনিধিকে সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানান। 

তবে পাউডেল দলগুলোকে ব্যাখ্যা করেন তাদের এই প্রস্তাব বাস্তাবায়ন সম্ভব নয় এবং পরিবর্তে সুশীলা কার্কিকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের জন্য রাজি করান।

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে অস্থির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অনান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও সেনাবাহিনীর অধীনে কাজ করছে। তবে সেনাপ্রধান সতর্ক করেছেন, ‘সিদ্ধান্ত এবং কর্তৃত্ব ছাড়া দীর্ঘদিন সেনাবাহিনী রাস্তায় রাখা সম্ভব নয়, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ 

এমএইচআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর