মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দেশভাগের উস্কানি দিয়ে খণ্ডিত ভারতের মানচিত্র প্রকাশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

দেশভাগের উস্কানি দিয়ে খণ্ডিত ভারতের মানচিত্র প্রকাশ

মার্কিন নেতৃতাধীন সামরিক জোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা ন্যাটোর পদাধিকারী পরিচয় দিয়ে ভারত ভাগের উস্কানিমূলক পোস্ট করে খবরের শিরোনামে এসেছেন অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ গুন্থার ফেহলিঙ্গার-জান। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘রাশিয়া ও চীনপন্থী’ বলেও নিশানা করেছেন তিনি। ইউরোপে বসে তিনি দিচ্ছেন ভারত ভাগের হুঙ্কার! সমাজমাধ্যমে ভারতের খণ্ডিত মানচিত্র ছড়িয়ে দেন। 


বিজ্ঞাপন


পাশাপাশি, ভারত ভাগের জন্য বিরোধী দলগুলিকে কাজে লাগানোর কথা বলে বিস্ফোরক পোস্টও দিয়েছেন। বিষয়টি নজরে আসতেই নড়চড়ে বসেছে নয়াদিল্লি। 

তড়িঘড়ি ব্লক করা হয় এক্স হ্যান্ডলের ওই অ্যাকাউন্ট। এভাবে ভারতকে নিশানা করার নেপথ্যে রয়েছে বড় কোনও ষড়যন্ত্র? ঘটনার জেরে এই প্রশ্নেরই জবাব খুঁজছেন কূটনীতিক থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা।

অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ গুন্থার ফেহলিঙ্গার-জানের সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডলে করা একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে দুনিয়া জুড়ে শুরু হয়েছে শোরগোল। সেখানে ‘ভারত ভেঙে সাবেক ভারত’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। 


বিজ্ঞাপন


পাশাপাশি, ভারতের একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছেন গুন্থার, যেখানে খণ্ডিত ভারতের অংশগুলি পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ এবং স্বাধীন খলিস্তানের অংশ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে। 

তার ওই পোস্ট ভারতের আমজনতার ক্ষোভের আগুনে যে ঘি ঢেলেছে, তা বলাই বাহুল্য। শুধু ভারত ভাগের কথা বলেই থেমে থাকেননি গুন্থার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও নিশানা করেছেন তিনি। 

এক্স হ্যান্ডলে অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ লিখেছেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী একজন রাশিয়াপন্থী মানুষ। খলিস্তানের স্বাধীনতার জন্য আমাদের আরও বন্ধু প্রয়োজন।

এই মন্তব্যের পরই সমাজমাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা। ভারতের নেটাগরিকেরা ইতিমধ্যেই তাকে ‘দানব’ বলে খোঁচা দিতে শুরু করে দিয়েছেন।

গুন্থারের পোস্ট ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ক্ষোভ তৈরি করেছে। এই ইস্যুতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছেন শিবসেনা এমপি প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী। 

সেখানে তিনি লিখেছেন, অবিলম্বে অস্ট্রিয়ার কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত। ওদের দূতাবাসের সামনে এটা তুলে ধরতে হবে। কারণ, তাদের নাগরিক যেটা করেছেন, সেটা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

উল্লেখ্য, গুন্থার যে এবারই প্রথম ভারত ভাগের কথা বললেন, এমনটা নয়। ২০২৩ সালে এক্স হ্যান্ডলে করা একটি পোস্টে মোদিকে ‘রুশপন্থী’ এবং ‘চীনপন্থী’ বলে আক্রমণ শানান তিনি। 

পাশাপাশি লোকসভায় বিরোধী নেতা তথা রায়বরেলির কংগ্রেস এমপি রাহুল গান্ধীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক জলঘোলা শুরু হয়ে গিয়েছে।

খণ্ডিত ভারতের মানচিত্রসহ অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদের পোস্ট প্রকাশ্যে আসতেই ওই অ্যাকাউন্ট ব্লক করে নয়াদিল্লি। যদিও ততক্ষণে পোস্টটির স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। 

সেখানে দিল্লি, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানকে স্বাধীন খলিস্তানের অংশ হিসাবে দেখিয়েছেন গুন্থার। এ ছাড়া জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের একটি বড় অংশ পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি। 

আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের আয়রন ডোমের নেতৃত্বে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরিফুল খান

সংশ্লিষ্ট মানচিত্রটির উপরে ডান দিকে ‘ভারতের বাস্তবতা’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে তাকে।

১৯৬৮ সালে অস্ট্রিয়ার লিনজেতে জন্ম হওয়া গুন্থারকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ইউরোপীয় শক্তিজোট ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা ন্যাটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন) সম্প্রসারণের কট্টর সমর্থক বললে অত্যুক্তি হবে না। 

পাশাপাশি ২৭টি রাষ্ট্রের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও বড় করতে চান তিনি। ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ডিগ্রি রয়েছে তার।

পশ্চিমা জোটকে আরও শক্তিশালী করতে এর আগে বহুবার ব্রাজিল এবং রাশিয়াকেও টুকরো টুকরো করার কথা বলেছেন গুন্থার। উস্কানিমূলক পোস্ট ছড়িয়ে বিভিন্ন সময়ে যথেষ্ট বদনাম কুড়িয়েছেন তিনি। 

গত শতাব্দীতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধে জড়িয়ে ন্যাটো তৈরি করে আমেরিকা। ১৯৪৯ সালের ৪ জুলাই জন্ম হওয়া সংশ্লিষ্ট চুক্তিটি আসলে একটা সামরিক সমঝোতা। এর সদর কার্যালয় রয়েছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। বর্তমানে এতে রয়েছে ৩২টি রাষ্ট্র। 

প্রথম পর্যায়ে মাত্র ১২টা দেশ নিয়ে তৈরি হয় ন্যাটো। কিন্তু পরবর্তীকালে কলেবরে বাড়তে থাকে এই সামরিক চুক্তি সংস্থা। ধীরে ধীরে এগোতে এগোতে সেটা রাশিয়ার দরজায় পৌঁছে গিয়েছে। 

মস্কোর প্রতিবেশী ইউক্রেনকেও সদস্যপদ দেওয়ার তোড়জোর শুরু করে ন্যাটো। ঠিক তখনই প্রমাদ গোনে ক্রেমলিন। এর পর জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কিয়েভ আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর ফলে গত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে পূর্ব ইউরোপে চলছে যুদ্ধ।

-এমএমএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর