ইন্দোনেশিয়ায় পার্লামেন্ট সদস্যদের বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভে ছয়জন নিহত হওয়ার পর সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দেশটির রাজধানী জাকার্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আজও দেশজুড়ে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলের দিকে বিক্ষোভকারীরা ন্যাশনাল পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হয় জনতা, যেখানে টহল দিতে দেখা গেছে সেনাদের। এছাড়া সুমাত্রার পালেমবাং, বোর্নিওর বানজারমাসিন এবং জাভার ইয়োগ্যাকার্তা শহরগুলোতেও বহু মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
২০ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাফতা কাইসিয়া কামেলিয়া বলেন, আমাদের প্রধান দাবি হলো পার্লামেন্ট সংস্কার করা। আমরা চাই সদস্যরা আমাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুক, কারণ তারা আমাদের প্রতিনিধি।
তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে আরও বলেন, তারা কি দেশে সামরিক আইন জারির অপেক্ষা করছে?
গত সপ্তাহে এমপিদের আবাসন ভাতা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হলেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ও সংসদ নেতারা সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। শুরুতে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল, তবে পরবর্তীতে তা সহিংস রূপ ধারণ করে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের গাড়ির চাপায় এক ২১ বছর বয়সী তরুণ নিহত হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিক্ষোভ আরও উত্তাল হয়ে ওঠে।
জাকার্তা থেকে বিক্ষোভ দেশের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাবোও ক্ষমতায় আসার পর এটি দেশটিতে সবচেয়ে তীব্র অস্থিরতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সোমবার পুলিশ রাজধানীজুড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে এবং সেনা-পুলিশ যৌথ টহল, কৌশলগত স্থানে স্নাইপার মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের প্রধান সড়কগুলো সাধারণত যানজটপূর্ণ হলেও বিক্ষোভ চলাকালে বেশিরভাগ সড়ক ফাঁকা দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
শহরের জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে শত শত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ও এমপি ভাতা প্রত্যাহার এই বিক্ষোভ প্রশমনে যথেষ্ট নয়।
৬০ বছর বয়সী নাস্তাশিল্পী সুয়ার্দি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার সরকার সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল। মন্ত্রিসভা ও পার্লামেন্ট জনগণের দাবি শোনে না। আমরা সবসময় প্রতারিত হয়েছি, তাই মানুষ ক্ষুব্ধ থাকে।
সংকটের মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও চীন সফর বাতিল করেছেন। বিক্ষোভ চলাকালে কয়েকজন এমপির বাড়িতে লুটপাট হয়েছে এবং অর্থমন্ত্রীর বাড়িতেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গত শুক্রবার মাকাসারে একটি আঞ্চলিক পার্লামেন্ট ভবনে আগুন লাগিয়ে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। একই শহরে ভুলক্রমে একজনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইয়োগ্যাকার্তায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক ছাত্রও নিহত হয়েছেন।
এফএ/

