মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

উল্টে যাচ্ছে দাবার গুটি, মিত্র হারিয়ে কোণঠাসা নেতানিয়াহু!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

উল্টে যাচ্ছে দাবার গুটি, মিত্র হারিয়ে কোণঠাসা নেতানিয়াহু!
উল্টে যাচ্ছে দাবার গুটি, মিত্র হারিয়ে কোণঠাসা নেতানিয়াহু!

গাজা যুদ্ধে কিছু সামরিক সফলতা পেলেও, দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েল কূটনৈতিকভাবে ক্রমেই একঘরে হয়ে পড়ছে। গাজা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন হারাচ্ছেন—এমনটাই উঠে এসেছে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির ২৩ আগস্টের একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর, পশ্চিমা বিশ্ব সরবভাবে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ায়। এই হামলার জবাবে গাজায় বড় পরিসরে সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল। শুরুতে আত্মরক্ষার অধিকার দেখিয়ে এ অভিযানকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততই ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি এবং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে পশ্চিমারা।


বিজ্ঞাপন


২০২৪ সালের শুরু থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত দৃশ্যমান হতে থাকে। একে একে স্পেন, নরওয়ে, আয়ারল্যান্ডসহ অন্তত ১৫টি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তারা গাজা ভূখণ্ডকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে আনার পরিকল্পনার কথাও তোলে।

গাজার ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ২০২৫ সালের মার্চে, যখন ইসরায়েল প্রায় সম্পূর্ণ অবরোধ জারি করে। এতে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বহু পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম তখন সরাসরি ইসরায়েলকেই এই সংকটের জন্য দায়ী করা শুরু করে। ইসরায়েলি অবরোধের ফলে গাজায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যার চিত্র আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এই অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুঁশিয়ারি দেয়। যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করে। ফ্রান্স প্রথমবারের মতো জি৭ ভুক্ত কোনো দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এই পদক্ষেপ নেতানিয়াহুকে আরও কোণঠাসা করে তোলে।


বিজ্ঞাপন


এতসব আন্তর্জাতিক চাপের মাঝেও নেতানিয়াহু নমনীয় না হয়ে উল্টো ইউরোপীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের কৌশল আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।

এমনকি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও একপর্যায়ে নেতানিয়াহুর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এক ফোনালাপে তিনি স্পষ্ট বলেন, গাজায় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রাখার মতো সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন না।

যদিও নেতানিয়াহু এখনো মনে করেন, পশ্চিমা চাপ কেবল কথার ফুলঝুরি, বাস্তবে তারা কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেবে না। তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের মতো মিত্ররা শেষ পর্যন্ত তার পাশেই থাকবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মিত্রতা থেকে তেল আবিব ততটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার সামরিক অভিযানে কৌশলগত কিছু সাফল্য এলেও, নেতানিয়াহুর আগ্রাসী এবং একপাক্ষিক কূটনৈতিক অবস্থান ইসরায়েলকে দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির মুখে ফেলছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাবে ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন প্রশ্নে ইসরায়েল যে আগের মতো শর্তহীন সমর্থন পাবে না—তা এখনই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সূত্র: আরটি

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর