ভারতের উত্তরপ্রদেশে ভুয়া দূতাবাসের পরে এবারে ভুয়া ‘পুলিশ থানা’ খুলে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে নয়ডা পুলিশ। তারা সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা এবং এই চক্রের নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তি একসময়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বঙ্গোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ছিলেন।
নয়ডা পুলিশ জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার আদি বাসিন্দা, বিভাস অধিকারী নামে ওই ব্যক্তির নাম এর আগে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতেও জড়িয়ে ছিল। ওই ভুয়া থানা থেকে জাল করা পুলিশের প্রতীক, পরিচয় পত্র, সিল, প্যাড ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভুয়া থানার ‘আন্তর্জাতিক’ নাম
নয়ডা পুলিশ জানিয়েছে যে ওই ভুয়া সংস্থার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’। সংস্থাটির একটি ওয়েবসাইটও আছে। ভারতের পুলিশ যে লাল আর নীল রঙ ব্যবহার করে তাদের থানা ও বিভিন্ন অফিসে, এই ভুয়া সংস্থাটিও ঠিক সেরকমই রঙ ব্যবহার করে সাইনবোর্ড বানিয়েছিল। সংস্থার ‘রেজিস্ট্রেশন’ হিসাবে তারা সাধারণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নিবন্ধনের যে প্রক্রিয়া, সেই অনুযায়ী ২০২৫ সালেই উত্তরপ্রদেশে নিজেদের সংস্থাটিকে রেজিস্ট্রি করিয়েছিল।
নিজেদের ওয়েবসাইটে তারা পরিচয় হিসাবে লিখেছে ‘একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা’। আবার তাদের ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, 'ইউরেশিয়া পোল' সহ নানা দেশের রেজিস্ট্রেশন-এর উল্লেখ আছে। ভারত সরকারের তিনটি মন্ত্রণালয়েরও রেজিস্ট্রেশন আছে বলে উল্লেখ আছে ওই ওয়েবসাইটের মূল পৃষ্ঠায়।
এছাড়াও নানা মানবাধিকার সংগঠন, সংবাদমাধ্যমের পরিচয়পত্র ইত্যাদিও পাওয়া গেছে। তবে ওইসব রেজিস্ট্রেশনের বেশিরভাগই আসলে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসাবে কাজের প্রশংসাপত্র। এগুলির কোনোটাই কোনো ধরনের অপরাধের তদন্তের কাজ নয়। যুক্তরাজ্যের রেজিস্টেশনটি আবার বাণিজ্যিক কোম্পানি হিসাবে করা।
নয়ডার সেন্ট্রাল জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শক্তিমোহন অবস্থী ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, আটক ছয়জন ভুয়া পরিচয় দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা সেজে একটা সমান্তরাল ব্যবস্থা গড়ার চেষ্টা করছিল।’
তিনি জানান, প্রত্যেকেই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে একজন আইনের স্নাতক, একজন এমবিএ করেছে বাকি চারজন মাধ্যমিক পাশ করেছে। বিভাস অধিকারীর ছেলেও রয়েছেন ধৃতদের মধ্যে।
যেভাবে ধরা পড়ল ভুয়া ‘পুলিশ’?
পুলিশ বলছে, গোপন সূত্রে তারা এই ভুয়া সংস্থাটির ব্যাপারে খবর পায়। নয়ডার সেক্টর ৭০-এ ১০-১৫ দিন আগে এরকম একটা সংস্থা বোর্ড লাগিয়ে অফিস খুলেছে বলে জানতে পারে পুলিশ। তবে ওই বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল জুন মাসের গোড়ায়।
শক্তিমোহন অবস্থী বলেন, ‘তথ্য পেয়েই জালিয়াতি, সরকারি নথির অপব্যবহার সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়। ভিজিটিং কার্ড, পরিচয় পত্র, চেক বই সহ নানা নথি আমরা উদ্ধার করি। কিন্তু আটককৃতরা আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার কর্মী বলে যে দাবি করছিল, তার সমর্থনে কোনও প্রমাণ তারা দিতে পারেন নি।’
নিজেদের পুলিশ কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়ে অনুদান সংগ্রহ করত, যা আসলে চাঁদাবাজি। তল্লাশি চালিয়ে ১৭টি স্ট্যাম্প সিল, নয়টি বিভিন্ন পরিচয় পত্র, ছয়টি এটিএম কার্ড, নয়টি মোবাইল ফোন এবং নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অফিস খোলার দিন দশেকের মধ্যেই এই ভুয়া ‘পুলিশ কর্মীরা’ বেশ কয়েকজনকে নিশানা করেছিল।
প্রসঙ্গত, কয়েক সপ্তাহ আগে দিল্লির আরেক উপনগরী গাজিয়াবাদে সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল ভুয়া দূতাবাসের। পুলিশ জানিয়েছিল, হর্ষবর্ধন জৈন নামে বছর ৪৮-এর এক ব্যক্তি গাজিয়াবাদে একটা বাড়ি ভাড়া করে সেখান থেকেই ভুয়া দূতাবাস পরিচালনা করছিলেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এমএইচআর

