রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার দায়ে ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে আগের ২৫ শতাংশসহ ভারতের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এরপরই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও কৌশলগত সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। এবার ট্রাম্পের দ্বিগুণ শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় ভারতে বয়কটের মুখে পড়েছে কোকা-কোলা ও ম্যাকডোনাল্ডস থেকে শুরু করে অ্যামাজন ও অ্যাপলসহ যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি।
সোমবার (১১ আগস্ট) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর থেকে ভারতজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অফলাইনে দেশীয় পণ্য কেনা ও মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক জোরদার হচ্ছে। দেশটির ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রতিবাদে মার্কিনবিরোধী এই মনোভাবে উসকানি দিচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মূলত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সমর্থিত ‘স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ’ রোববার ভারতে ছোট ছোট জনসভা করে মার্কিন ব্র্যান্ড বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে।
সংগঠনটির সহ-সমন্বয়ক অশ্বিনী মহাজন বলেন, ‘মানুষ এখন ভারতীয় পণ্যের দিকে নজর দিচ্ছে। এটি কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে। এটি জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের ডাক।’
তিনি ভারতীয়দের মাঝে হোয়াটসঅ্যাপে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পণ্যের একটি তালিকাও প্রচার করছেন। রয়টার্সের কাছে দেওয়া এই তালিকায় বিদেশি পণ্যের বিকল্প হিসেবে দেশীয় ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠনটির প্রচারণায় ‘বিদেশি ফুড চেইন বর্জন করুন’ শিরোনামে ম্যাকডোনাল্ডসসহ একাধিক রেস্টুরেন্ট ব্র্যান্ডের লোগোও দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, বিশ্বের সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ ভারতে দ্রুত বাড়তে থাকা সচ্ছল ভোক্তা শ্রেণিকে লক্ষ্য করে মার্কিন ব্র্যান্ডের বড় বাজার তৈরি হয়েছে। যাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডেগুলোর প্রতি আকৃষ্ট এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ব্যবহারকে উন্নতির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন।
উদাহরণস্বরুপ ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে ভারতের অবস্থান শীর্ষে। তেমনি দেশটিতে অন্য যেকোনও ব্র্যান্ডের চেয়ে বেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে ডমিনোজের। প্রায় সব দোকানে পেপসি ও কোকা-কোলা। নতুন অ্যাপল স্টোরের উদ্বোধন কিংবা স্টারবাকস ক্যাফেতে অফার দেওয়া হলে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
রয়টার্স বলছে, যদিও মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাকে কোম্পানিগুলোর বিক্রিতে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। তবে এতে রপ্তানিকারকদের উত্তেজিত করে তুলেছে এবং নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
ম্যাকডোনাল্ডস, কোকা-কোলা, অ্যামাজন ও অ্যাপল এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের সাড়া দেয়নি।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওয়াও স্কিন সায়েন্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মনীশ চৌধুরী লিংকডইনে এক ভিডিও বার্তায় দেশটির কৃষক ও স্টার্টআপগুলোকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘মেড ইন ইন্ডিয়াকে’ বিশ্বজুড়ে আবেগের পণ্যে পরিণত করতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘এই দেশটির খাদ্য ও সৌন্দর্য বর্ধনের সব পণ্য সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। আর আমরা হাজার হাজার মাইল দূরের পণ্যের জন্য লাইন ধরেছি। বিদেশি ব্র্যান্ডের পেছনে গর্ব করে অর্থ খরচ করেছি। অথচ আমাদের প্রস্তুতকারকরা নিজ দেশে মনোযোগ পাওয়ার জন্য রীতিমতো লড়াই করছেন।’
ভারতের ‘ড্রাইভ ইউ’ নামের ড্রাইভার সার্ভিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাহম শাস্ত্রী লিংকডইনে লিখেছেন, ‘ভারতের নিজস্ব টুইটার, গুগল, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক থাকা উচিত—যেমন চীনের আছে।’
গত রোববার বেঙ্গালুরুতে এক সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাগরিকদের ‘আত্মনির্ভর’ হওয়ার বিশেষ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘ভারতীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বিশ্ববাজারের জন্য পণ্য তৈরি করে। বর্তমানে ভারতের প্রয়োজনকে আরও অগ্রাধিকার দেওয়ার সময় এসেছে।’ তবে কোনো কোম্পানির নাম উল্লেখ করেননি মোদি।
এদিকে দেশজুড়ে মার্কিন পণ্যবিরোধী প্রতিবাদের মধ্যেও সোমবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে দ্বিতীয় শোরুম উদ্বোধন করেছে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ও নয়াদিল্লির মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ভারতীয় খুচরা কোম্পানিগুলোর দেশীয় বাজারে স্টারবাক্সের মতো বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বিশ্ববাজারে টিকে থাকা ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখমুখি হচ্ছে। তবে ভারতীয় আইটি সেবা প্রদানকারী টিসিএস ও ইনফোসিসের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে জোরাল অবস্থান তৈরি করেছে।
এমএইচআর

