থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ফের সীমান্ত সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ। শুক্রবার সকালেও উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। থাই সেনাবাহিনী দাবি করেছে, কম্বোডিয়ার বাহিনী ভারী অস্ত্র ও রকেট ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে।
এক বিবৃতিতে থাই সেনাবাহিনী জানায়, কম্বোডিয়া বিএম-২১ রকেট লাঞ্চার ও ফিল্ড আর্টিলারি দিয়ে ধারাবাহিকভাবে গোলাবর্ষণ চালায়। পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে থাই সেনারাও সশস্ত্র হামলা চালায়।
বিজ্ঞাপন
এর একদিন আগেই, বৃহস্পতিবার সীমান্তে উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে কমপক্ষে ১১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। ওই ঘটনার পর থাইল্যান্ড ছয়টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে। এর মধ্যে একটি বিমান কম্বোডিয়ার একটি সামরিক অবস্থানে বোমা ফেলে।
সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ছয়টি এলাকায়, যেগুলোর ওপর দুই দেশেরই দাবি রয়েছে বহু দিন ধরে। শুরুতে হালকা অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হলেও পরে তা ভারী গোলাবর্ষণে রূপ নেয়। এটি ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও সহিংস সশস্ত্র সংঘাত বলেই মনে করা হচ্ছে।
থাই সেনাবাহিনীর একজন সদস্যের পা বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়ার ঘটনাও পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, এই মাইন কম্বোডিয়ার সেনারাই পুঁতে রেখেছিল। কম্বোডিয়া অবশ্য এই অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
পরিস্থিতির অবনতির কারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আজ জরুরি বৈঠকে বসছে। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে থাইল্যান্ডকে ‘পূর্বপরিকল্পিত সামরিক আগ্রাসনের’ জন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিজ্ঞাপন
এরই মধ্যে থাইল্যান্ড নমপেন থেকে নিজের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে এনেছে এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে। থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই বলেন, এই হামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই, কিন্তু আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের রয়েছে।’
ফুমথাম আরও জানান, বেসামরিক এলাকায় ভারী অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। সুরিন প্রদেশের একটি হাসপাতালে সরাসরি গোলাবর্ষণ হয়েছে। থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোমসাক থেপসুথিন একে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
থাইল্যান্ডের তিনটি প্রদেশে গোলাবর্ষণে এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি আট বছরের শিশু। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩১ জন।
তবে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে হতাহতের কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। জানা যায়নি, কতজন মানুষ নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমুখপাত্র টমি পিগট বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং বেসামরিক মানুষের মৃত্যুতে শোকাহত। আমরা উভয় পক্ষকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’
সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে বহু মানুষ বাংকারে আশ্রয় নিয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সূত্র: রয়টার্স
এইউ

