‘গাজা উপত্যকা ইসরায়েল রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের উগ্র ও কট্টর ডানপন্থি দলের নেতা অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রধান ইয়াল জামিরও এ ধারণার পক্ষে মত দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
মঙ্গলবার ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ‘দ্য গাজা রিভেরা- লক্ষ্য থেকে বাস্তবতা’ র্শীষক এক সম্মেলনে স্মোট্রিচ এ বিষয়ে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের পর গাজা কে শাসন করবে তা নিয়েই এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
স্মোট্রিচ এবং অন্যান্য অতি-ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা বারবার ইসরায়েলকে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং উপত্যকায় বসতি স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সম্মেলনের নাম এবং উদ্দেশ্য গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়েছিল। ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করবে, সেখানে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করা হবে এবং গাজাকে একটি সমৃদ্ধ উপত্যকা, কর্মসংস্থানের সুযোগসহ একটি অবকাশ নগরীতে পরিণত করা হবে।’
সম্মেলনে স্মোট্রিচ বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি এখানে একটি অসাধারণ সুযোগ রয়েছে। আমরা ইসরায়েলের উত্তর সীমান্ত এলাকা দিয়ে শুরু করবে এবং সেখানে তিনটি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করবে। আমরা ইতিমধ্যেই এটি নিয়ে কথা বলছি।’
বিজ্ঞাপন
অতি-ডানপন্থী ধর্মীয় জায়নিজম পার্টির প্রধান স্মোট্রিচ আরও বলেছেন, ‘গাজাবাসীদের অন্য দেশে স্থানান্তরের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা এই উপত্যকার বসতি স্থাপনকে সহজতর করার উপায় হিসেবে কাজ করবে। চীফ অব স্টাফ গত সপ্তাহে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন।’
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- নেতানিয়াহু সরকারের মন্ত্রী, নেসেট সদস্য, আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান, নিরাপত্তা কর্মী, গাজায় আটক জিম্মিদের আত্মীয়স্বজন, গবেষক এবং কর্মীরা। তারা গাজায় ইহুদি বসতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়টি সরকারের নীতিমালায় রূপান্তরের আহ্বান জানান।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, সম্মেলনে উপস্থাপিত ইসরায়েলি বসতি পরিকল্পনার বিশদ বিবরণের মধ্যে রয়েছে- গাজা উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে- দুটি শহর প্রতিষ্ঠা করা হবে, যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি শিল্প এলাকা, একটি বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তি পার্ক এবং সমুদ্র সৈকতের পাশে হোটেলসহ একটি পর্যটন জেলা থাকবে।
স্মোট্রিচ বলেন, ‘আমরা গাজা দখল করব এবং এটিকে ইসরায়েল রাষ্ট্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করব। এই পরিকল্পনা গাজায় লাখ লাখ বাসিন্দা এতে উপকৃত হবে এবং আমাদের জন্য আবাসন সমস্যা এবং আবাসনের খরচও কমবে।’
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের ঘোষণার পর, জোর করে গাজাবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে আরব দেশগুলোসহ ওয়াশিংটনের পশ্চিমা মিত্ররাও। পাশাপাশি জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থা মত দিয়েছে, এই পরিকল্পনা ফিলিস্তিনি জাতিগত নিধনের সমার্থক।
সৌদি সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূখণ্ড থেকে সরানোর যেকোনো উদ্যোগ তারা প্রত্যাখ্যান করে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক স্থাপনে তারা আগ্রহী নয়।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার নিন্দা জানায়।
গাজা শাসনকারী গোষ্ঠীটির দাবি, গাজাবাসীদের গাজা ছেড়ে যেতে বলা আর তাদেরকে 'নিজ ভূখণ্ড থেকে বহিষ্কার করা' একই কথা। 'আমরা মনে করি, এতে এই অঞ্চলে নতুন করে আরও গোলযোগ ও অস্থিরতার সৃষ্টি হবে, কারণ গাজাবাসীরা এরকম কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেবে না’।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, আনাদোলু
এমএইচআর

