ভারতের কেন্দ্রেীয় সরকারের পরিকল্পনায় বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে লাখ লাখ মানুষের নাম বাদ দেওয়াকে সরাসরি ‘যড়যন্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা থেকে একজনেরও নাম বাদ গেলে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
সোমবার কলকাতায় ‘২১ জুলাই— শহিদ দিবস’ উপলক্ষে এক সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেন মমতা।
বিজ্ঞাপন
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেস ভোটার কার্ডকে ভোট দেওয়ার জন্য একমাত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে কলকাতায় এক সমাবেশ করেছিল। সেই সমাবেশে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গুলিতে ১৩ জন নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনার পরই কংগ্রেস থেকে পৃথক হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেছিলেন মমতা এবং তখন থেকেই প্রতি বছর ২১ জুলাইয়ে শহিদ দিবস পালন করে আসছে।
সম্প্রতি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আধিকারীর নেতৃত্বে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের’ নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন বিজেপির বিধায়কেরা। বিহারের উদাহরণ টেনে বলেছিলেন, সেখানকার মতো বাংলাতেও ‘অবৈধ’ ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। শুভেন্দুদের দাবি, বাংলার ভোটার তালিকায় মিশে রয়েছে ‘অনুপ্রবেশকারী’ রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাম। সেগুলো অবিলম্বে বাদ দিতে হবে।
কারও নাম না-করে জনসভায় মমতার পাল্টা দাবি, ‘এখানে কেউ কেউ বলছে বাংলায় নাকি ১৭ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছেন! জাতিসংঘের সর্বেশেষ পরিসংখ্যান বলছে, সারা পৃথিবীতে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ। বেড়ে সেটা হয়তো ১৩ লাখ হয়েছে। তবে ভারতে ১৭ লাখ এলো কোথা থেকে?’
নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে আক্রমণ করে মমতা অভিযোগ করেন, এটি কার্যত ‘সুপার এমার্জেন্সি’। গুজরাট থেকে বসে বাংলার মানুষের নাম কাটা হচ্ছে। বিহারে নাম বাদ দেওয়ার কাজ চলছে। একজন বাঙালির সঙ্গে চারজন ভিনরাজ্যের নাম ঢোকানো হচ্ছে। এটা চালিয়ে গেলে রাস্তায় নামতে হবে। দরকার হলে দিল্লিতে গিয়ে কমিশনের দফতর ঘেরাও হবে। বাংলার স্বার্থে প্রয়োজনে কেন্দ্রকেও চ্যালেঞ্জ জানাবে তৃণমূল।
বিজ্ঞাপন
মমতা আরও বলেন, বিভিন্ন ভিনরাজ্যে বাংলাভাষীদের বারবার রোহিঙ্গা বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বহু বাঙালিকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, কমপক্ষে হাজার খানেক বাঙালি আজ জেলে বন্দি। ঠিক কতজনকে (বাংলাদেশে) পুশব্যাক করা হয়েছে, সেটা আজও কেউ জানে না। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা, এই নিপীড়ন ও ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না।
তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘আমি আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের বলব, আপনারা বাংলায় ফিরে আসুন। রাজ্যে এখন কাজের অভাব নেই। আপনারা এখানেই কাজ পাবেন। বাইরে থাকতে হবে না।’
মমতা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা যেহেতু রাজ্যের বাইরে থাকেন, তাই তাদের নামও ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওযার ‘ছক’ কষা হতে পারে।
সূত্র: আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস
-এমএইচআর

