বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ দিন ধরে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন। উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলি নিয়ে। তবে একটি নতুন গবেষণা সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সারা বিশ্ব যখন কৃত্রিম মেধার ভবিষ্যৎ প্রভাব এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা নিয়ে বিস্তর জল্পনায় মেতেছে, তখনই নিজের ক্ষমতা দেখাতে প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। তেমনটাই উঠে এলে এক গবেষণায়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ দিন ধরে আসন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন। উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলি নিয়ে। তবে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস (পিএনএএস)’-এ প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
সেই গবেষণা অনুযায়ী, শীঘ্রই বিশ্বের অন্যতম মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে পারে আমেরিকা। কিন্তু কী সেই বিপর্যয়?
আরও পড়ুন: একই তরুণীকে বিয়ে করলেন দুই ভাই!
ওই গবেষকেরা জানিয়েছেন, ১,০০০ কিমি. বিস্তৃত ‘কনভারজেন্ট’ পাত সীমানা (পৃথিবীর এমন একটি এলাকা যেখানে দুই বা ততোধিক লিথোস্ফিয়ারিক প্লেটের সংঘর্ষ হয়) ‘ক্যাসকাডিয়া সাবডাকশন জোন’ ৩০০ বছর ধরে শান্ত রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ক্যাসকাডিয়া সাবডাকশন জোন ১,০০০ কিমি ‘কনভারজেন্ট’ পাত সীমানা, যা উত্তর আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল থেকে প্রায় ১০০-২০০ কিমি দূরে অবস্থিত এবং কানাডার উত্তর ভ্যাঙ্কুভার থেকে আমেরিকার উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ওই সীমানা ভেঙে গেলে সেটি একটি বিশাল ভূমিকম্পের সৃষ্টি করতে পারে। আর সেই ভূমিকম্পের অভিঘাতে সুনামি আসতে পারে ১০০ ফুট উঁচু ঢেউসহ।

মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে আমেরিকার উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া থেকে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া পর্যন্ত এলাকায়। বহু মানুষের প্রাণহানি হতে পারে।
নতুন ওই গবেষণা অনুযায়ী, ক্যাসকাডিয়া সাবডাকশন জোন অশান্ত হয়ে উঠলে পৃথিবীতে হঠাৎ এবং গুরুতর পরিবর্তন হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের একাংশের পর্যবেক্ষণ, বড় ভূমিকম্পের সময় কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মাটি ০.৫ মিটার থেকে ২ মিটার পর্যন্ত ধসে যেতে পারে।
ফলে, বাড়িয়ে তুলতে পারে বন্যার ঝুঁকি। ক্যাসকাডিয়া সাবডাকশন জোনের ক্ষেত্রে সেই ক্ষতি আরও মারাত্মক হতে পারে। মাটি অনেকটা ধসে যেতে পারে বলে ওই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
গবেষণায় এ-ও সতর্ক করা হয়েছে, ২১০০ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীতে বন্যার ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষ, বাড়িঘর এবং রাস্তার সংখ্যা বর্তমানের তিন গুণেরও বেশি হতে পারে।
তাই ভবিষ্যতে ক্ষতি কমাতে সেই ক্রমবর্ধমান বিপদের প্রতি আরও মনোযোগ, পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সেই প্রসঙ্গে বিবিসি সায়েন্স ফোকাসের সঙ্গে কথা বলার সময় গবেষক তথা অধ্যাপক টিনা ডুরা বলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কথা বলছি আমরা।
বছরে তিন থেকে চার মিলিমিটার করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কয়েক মিনিটের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দু’মিটার বৃদ্ধি পাবে।
ডুরা আরও যোগ করেছেন, আমেরিকায় একটি বিপর্যয় ঘটতে চলেছে। এটি একটি দ্বৈত হুমকি। সুনামি আসতে চলেছে এবং তা ধ্বংসাত্মক হতে চলেছে। আমরা এটাও জানি যে কিছু জায়গা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আবার কিছু জায়গায় উপকূলীয় পরিবেশের কারণে গুরুতর প্রভাব পড়বে না। তবে সেই অঞ্চলগুলিতেও ক্ষতি হতে পারে।
ওই গবেষণায় এ-ও উঠে এসেছে যে, প্রতি বছর অনেক উপকূলীয় অঞ্চল ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু ওয়াশিংটন, অরেগন এবং উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার কিছু অংশে দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। ভূগর্ভস্থ গতিবিধির কারণে ওই সব এলাকায় ভূমির উচ্চতা বাড়ছে।
অ্যাস্টোরিয়া, পোর্ট অরফোর্ড এবং ক্রেসেন্ট সিটির মতো শহরে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তুলনায় ভূমির উচ্চতা নাকি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওই সব অঞ্চলে নাকি পানির স্তর স্থিতিশীল রয়েছে বা সামান্য হ্রাস পাচ্ছে। আবার ইয়াকুইনা বে এবং কুস বে-এর মতো অঞ্চলে ভূমিস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ধীরে।
ব্যতিক্রম উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার হামবোল্ট বে। ওই অঞ্চলের মাটি ক্রমশই ডুবে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ভূমির তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
২০৫০ সালের মধ্যে পানির স্তর ১০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ২১০০ সালের মধ্যে, কার্বন নির্গমন উচ্চ মাত্রায় থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৪০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
-এমএমএস

