গাজার মধ্যাঞ্চলে একটি ক্লিনিকের সামনে পুষ্টিকর সম্পূরক খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আট শিশু ও চার নারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলায় আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯ জনই শিশু।
বৃহস্পতিবার গাজার দেইর আল-বালাহর আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের সামনে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে ক্লিনিকটি পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাহায্য সংস্থা প্রজেক্ট হোপ।
সংস্থাটি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে দেইর আল-বালাহ এলাকায় অবস্থিত তাদের আলতায়ারা স্বাস্থ্য ক্লিনিকের সামনে এই হামলা চালানো হয়। অনেকেই অপুষ্টি, নানা ধরনের সংক্রমণ, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং আরও অনেক সমস্যার চিকিৎসার জন্য বাইরে জড়ো হচ্ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউসুফ আল-আইদি সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘হঠাৎ আমরা একটি ড্রোনের শব্দ শুনতে পেলাম এবং তারপর বিস্ফোরণ ঘটল। আমাদের পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠল এবং চারপাশের সবকিছু রক্তাক্ত আর আর্ত-চিৎকারে পরিণত হলো’।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ফুটেজ যাচাই করেছে বিবিসি, যেখানে হামলার পরের ঘটনা দেখা গেছে– প্রাপ্তবয়স্ক ও ছোট শিশুরা রাস্তায় পড়ে আছে, কয়েকজন গুরুতর আহত এবং অন্যরা নড়াচড়া করছে না।
বিজ্ঞাপন
জানাজার নামাজ পড়ার আগে পাশের আল-আকসা হাসপাতালের মর্গে শিশুদের মৃতদেহ সাদা কাফন ও বডি ব্যাগে মুড়িয়ে কাঁদছিলেন নিহতদের আত্মীয়রা।
ইন্তিসার নামে একজন নারী বিবিসিকে জানান, নিহতদের মধ্যে তার গর্ভবতী ভাগ্নী মানাল ও তার মেয়ে ফাতিমাও ছিল এবং মানালের ছেলে ছিলেন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় তিনি বাচ্চাদের জন্য সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন’।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক নারী বললেন, ‘কোন পাপের জন্য তাদের হত্যা করা হলো?, আমরা পুরো বিশ্বের কান এবং চোখের সামনে মারা যাচ্ছি। পুরো বিশ্ব গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি দেখছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে যদি মানুষ নিহত নাও হয়, সাহায্য আনতে গিয়ে তারা মারা যায়।’
সাহায্য গোষ্ঠীর ক্লিনিকগুলোকে গাজার বাসিন্দাদের জন্য আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে উল্লেখ্য করে প্রজেক্ট হোপের সভাপতি এবং সিইও রাবিহ তোরবে বলেন, ‘এসব ক্লিনিকে মানুষ তাদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে আসে, নারী গর্ভাবস্থা ও প্রসবোত্তর যত্ন নেয়, অপুষ্টির জন্য চিকিৎসাসহ নানা স্বাস্থ্য সহায়হা পায় মানুষ। এরপরও বৃহস্পতিবার সকালে, সহায়তা কেন্দ্রের দরজা খোলার অপেক্ষায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরীহ পরিবারগুলোকে নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি ভয়ঙ্কর এবং হৃদয়বিদারক ঘটনা, এটি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এমন ঘটনা স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেয় যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও গাজায় কেউ এবং কোনো এলাকা নিরাপদ নয়। এটি চলতে পারে না। পরিবারগুলোর জন্য কেমন লাগছে তা ঠিকভাবে বলতে পারবো না’।
ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথেরিন রাসেল বলেছেন, ‘জীবন রক্ষার জন্য সাহায্য পেতে চেষ্টা করা পরিবারগুলোকে হত্যা অযৌক্তিক।’
এদিকে এই হামলার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক হামাস যোদ্ধার ওপর আঘাত হানার দাবি করেছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা হামাসের সামরিক শাখার অভিজাত নুখবা বাহিনীর একজন সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছিল, যে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলায় অংশ নিয়েছিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং বেসামরিক ব্যক্তিদের যেকোনো ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে আইডিএফ।’
অন্যদিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে বলেছে, এটি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ‘চলমান গণহত্যা অভিযানের অংশ’।
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘ইসরায়েল এখন স্কুল, রাস্তা, আশ্রয়কেন্দ্র ও বেসামরিক এলাকায় নিরীহ মানুষের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব হামলা একেবারে পরিকল্পিতভাবে চালানো হচ্ছে; যা পুরোদমে জাতিগত নির্মূল অভিযান এবং এ অপরাধ পুরো বিশ্বের চোখের সামনেই ঘটছে।’
সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা
-এমএইচআর

