ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুতে আবিষ্কৃত হলো ৩০০০ বছর আগের এক হারানো প্রাচীন শহর। সম্প্রতি দেশটির প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রকাশ্যে এনেছেন পেনিকো নামের ওই নগরকেন্দ্রটির।
ধারণা করা হচ্ছে, উপকূলীয় অঞ্চল, আন্দিজ পর্বতমালা ও আমাজন বনাঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল এই শহরটি।
বিজ্ঞাপন
পেনিকো শহরটি রাজধানী লিমার উত্তরে হুয়াউরা প্রদেশে অবস্থিত। পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আট বছর ধরে খনন ও সংরক্ষণ কার্যক্রম শেষে শহরটি গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
গবেষকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত এই শহরটি সুপে উপত্যকার উপকূলীয় জনপদকে আন্দিজ পর্বতমালা ও আমাজনের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করত।
এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, যা শহরটিকে বিভিন্ন পরিবেশগত অঞ্চলের সহজলভ্যতায় সহায়তা করত।
কারাল প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল (জেপএসি)-এর পরিচালক ও প্রধান গবেষক রুথ শাদি বলেন, এই নগর কেন্দ্রটি কারাল সভ্যতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছিল।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, কারাল সভ্যতার পতনের পর পেনিকো একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদে পরিণত হয়। এর কৌশলগত অবস্থান উপকূল, পর্বত ও আমাজনের অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করেছিল।
এখন পর্যন্ত প্রত্নতত্ত্ববিদরা পেনিকো শহরে ১৮টি স্থাপনার সন্ধান পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে বিশালাকৃতির আবাসিক ভবন।
আবিষ্কৃত প্রধান স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ‘বি১-বি৩’, যেখানে গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন বিভিন্ন ধর্মীয় সামগ্রী—মাটির ভাস্কর্য, পূজার উপকরণ।
এছাড়া পুতুতু নামের শাঁখের তৈরি ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র, যেগুলো ধর্মীয় সমাবেশ বা আধ্যাত্মিক বার্তা পৌঁছাতে ব্যবহৃত হতো।
তথ্যপ্রমাণ থেকে আরও জানা যায়, শহরটি হয়তো হেমাটাইট বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিল। হেমাটাইট হলো এক ধরনের লাল খনিজ, যার প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে আন্দিজ অঞ্চলীয় বিশ্বদর্শনে।
সাংস্কৃতিক পর্যটন উন্নয়নের অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ সেখানে একটি আধুনিক ব্যাখ্যা কেন্দ্র, দর্শনার্থী সংবর্ধনা কেন্দ্র এবং পুনর্গঠিত ধ্বংসাবশেষ ঘুরে দেখার জন্য হাঁটার পথ তৈরি করেছে।
শহরটির উদ্বোধনের অংশ হিসেবে আগামী শনিবার প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে পেনিকো রাইমি উৎসব। এতে ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় আচার, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
-এমএমএস

