বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলির বর্ণনা দিলেন সাবেক নিরাপত্তাকর্মী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলির বর্ণনা দিলেন সাবেক নিরাপত্তাকর্মী

গাজায় ইসরায়েল ও মার্কিন-সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে মেশিনগান দিয়ে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর দৃশ্য দেখেছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন একটি ত্রাণ কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করা সাবেক এক কর্মী। যাদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে তারা কোনো হুমকি ছিল না– বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, একবার একদল নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে, শুধুমাত্র একটু ধীরে চলায় ওয়াচ টাওয়ার থেকে একজন ইসরায়েলি সেনা মেশিনগান দিয়ে গুলি চালায়।


বিজ্ঞাপন


গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৬ মে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই তাদের খোলা চারটি ত্রাণ কেন্দ্রের কাছে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর এই ‘মৃত্যুর ফাঁদে’ কমপক্ষে ৬৫২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এছাড়াও ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ হয়েছেন।

দক্ষিণ ও মধ্য গাজার বেশ কয়েকটি এলাকায় সীমিতভাবে ত্রাণ বিতরণের মাধ্যমে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করার পর গাজার ওপর ১১ সপ্তাহের সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল, এরপর থেকে ওই এলাকায় আর কোনো খাবার প্রবেশ করেনি। শুরু থেকেই সহায়তা বিতরণের এই ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। কারণ এর ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষকে সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে হেঁটে অল্প কয়েকটি জায়গায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছিল। যদিও ইসরায়েল মনে করে, তাদের নতুন এই পদক্ষেপের ফলে হামাসের সাহায্য পাওয়ার পথ বন্ধ হয়েছে।

এদিকে ত্রাণকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সাবেক ওই কর্মী বিবিসিকে একটি ভিডিও ফুটেজও পাঠিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


ফিলিস্তিনিদের একটি দলের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি চালানো ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ইসরায়েলি সেনা একটি লম্বা জায়গার ওপর দাঁড়িয়ে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে জনতার ওপর বারবার ১৫ থেকে ২০টি করে গুলি চালাতে শুরু করে।’

gaza3

তিনি বলেন, ‘একজন ফিলিস্তিনি নিশ্চল হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। এরপর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য আরেকজন নিরাপত্তারক্ষী এসে বলল, দারুণ, আমার মনে হয় তুমি একজনকে মেরেছো! আর তারপর তারা এটা নিয়ে হেসে উঠল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসির সঙ্গে কথা বলা ওই ব্যক্তি বলেন, জিএইচএফের পরিচালকরা তার প্রতিবেদনটিকে কাকতালীয় ঘটনা বলে উড়িয়ে দেয় এবং দাবি করে, ফিলিস্তিনি ব্যক্তিটি হয়তো ‘হোঁচট খেয়ে পড়েছিলেন’ অথবা ‘ক্লান্ত ও অজ্ঞান’ হয়ে গিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করছে তারা। তারা একটি বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছে, জিএইচএফ সহায়তা কেন্দ্রের কাছে কোনো বেসামরিক নাগরিক কখনো গুলিবিদ্ধ হননি।

জিএইচএফ দাবি করেছে, এই অভিযোগকারী ব্যক্তি একজন ‘অসন্তুষ্ট সাবেক কর্মী’ যাকে তারা অসদাচরণের জন্য বরখাস্ত করেছিল।

যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই কর্মী। বিবিসিকে তিনি বেতনের কয়েকটি স্লিপ দেখিয়েছেন যাতে বোঝা যাচ্ছে, ওই পদ ছাড়ার পরও তাকে দুই সপ্তাহ ধরে বেতন দেওয়া হয়েছে।

জিএইচএফ পরিচালিত চারটি বিতরণ কেন্দ্রে কাজ করা ওই ব্যক্তি বিবিসিকে জানান, সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে নিয়ম, নিয়ন্ত্রণ খুবই কম যা দায়মুক্তির সুযোগ করে দেয়।

নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের কোনো স্পষ্ট নিয়ম বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি। একজন টিম লিডার তাদের বলেছিলেন, ‘যদি তুমি হুমকি মনে করো, গুলি করো- আগে হত্যা করার জন্য গুলি করো এবং পরে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করো’।

gaza2

তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সমগ্র এলাকার কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং জিএইচএফের দাবি–– সেখানে কেউ আহত বা গুলিবিদ্ধ হয়নি এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।

সাবেক ওই কর্মী বলেন, ইসরায়েলের সেনা দলের নেতারা গাজার বাসিন্দাদের ‘জম্বি’' বা ‘মৃত মানুষের দল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা এই মানুষগুলোর কোনো মূল্য নেই বলেই ইঙ্গিত দিয়ে।

তিনি আরও জানান, জিএইচএফ সাইটগুলোতে ফিলিস্তিনিরা অন্যভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। স্টান গ্রেনেডের ধ্বংসাবশেষের আঘাত কিংবা মানুষের ভীড়কে কাটাতারের মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে উদাহরণ হিসেবে বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘একবার একজন পুরুষের মুখে পিপার স্প্রের পুরো ক্যানই ঢেলে দেয়া হয়েছিল বা একজন নারী স্টান গ্রেনেডের ধাতব অংশে আঘাত পেলেন, যা ভুলভাবে ওই মানুষগুলোর দিকে ছোঁড়া হয়েছিল। এই ধাতব টুকরোটি সরাসরি তার মাথায় আঘাত করে এবং সে নড়তে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়, আমি জানি না সে মারা গেছে কিনা। আমি কেবল দেখলাম, সে অজ্ঞান ও সম্পূর্ণরূপে নিস্তেজ ছিল।’

এ সপ্তাহের শুরুতে জিএইচএফ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ১৭০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা এবং অন্যান্য এনজিও। অক্সফাম এবং সেভ দ্য চিলড্রেনসহ সংস্থাগুলো বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ‘নিয়মিতভাবে’ সাহায্যপ্রার্থী ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায়।

তবে সৈন্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল। তারা বলছে, জিএইচএফ এর ব্যবস্থাপনা হামাসের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে, সাহায্য প্রার্থীদের সরাসরি সহায়তা প্রদান করে।

 

-এমএইচআর

 

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর