শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

ইরানে ‘ব্যর্থ হামলা’ চালিয়ে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ইরানে ‘ব্যর্থ হামলা’ চালিয়ে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে ইসরায়েল
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ।

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলাকে ‘ঐতিহাসিক কৌশলগত ভুল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা। ইসরায়েলি গণমাধ্যমও সমালোচনায় সরব। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে চালানো এই আগ্রাসন তার কাঙ্ক্ষিত ফল আনতে তো পারেনি, উল্টো ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থান, অবকাঠামো এবং জনমনে গভীর সংকট তৈরি করেছে।

পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসে ব্যর্থতা, উল্টো জাতীয় সংহতি


বিজ্ঞাপন


হারেৎজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনাগুলি ধ্বংস করা। কিন্তু বাস্তবে এসব স্থাপনার উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইরানে জাতীয় সংহতি আরও সুদৃঢ় হয়েছে। শাসক ও বিরোধী—সব পক্ষ এখন এক মঞ্চে, দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় একাত্ম।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, "১২ দিনের যুদ্ধ শেষে এমন অনেক ইরানিও এখন সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে যারা আগে বিরোধিতা করতেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা লিখছেন—দেশের স্বার্থে আমরা একসঙ্গে যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।"

নেতানিয়াহুর কৌশল উল্টো ফল দিয়েছে

নেতানিয়াহু চেয়েছিলেন এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলি শক্তির প্রদর্শন ঘটাতে। কিন্তু এই আক্রমণ ঘিরে দেশ-বিদেশে ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলকে এখন আরও বিচ্ছিন্ন মনে হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


ইসরায়েলের ভেতরেও শুরু হয়েছে প্রশ্নের ঝড়। নেতানিয়াহুর মিত্ররাও চাপের মুখে, কারণ জনগণ জানতে চাইছে—কেন এই বিপর্যয়?

বিপুল ধ্বংস, সেন্সরশিপ আর অপ্রকাশিত ক্ষয়ক্ষতি

ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় তেল আবিব, হাইফা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের পরিবেশ সুরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে—এই স্বল্প সময়ের সংঘাতে প্রায় ৮ লাখ টন নির্মাণ ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে, যা দেশটির বার্ষিক গড় নির্মাণ বর্জ্যের ১০–১৫%।

সামরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোর ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা এখনো সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি। সেন্সরশিপ আরোপ করে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রতিবেদন প্রকাশেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি—সরকারি হিসাবের চেয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।

সামরিক নির্ভরতা ও মনস্তাত্ত্বিক আঘাত

ইসরায়েল এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত পণ্যবাহী বিমানে দ্রুত অস্ত্র আমদানি করছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, তারা পরবর্তী পর্যায়ের সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে অস্ত্রশস্ত্রের জোগান যতই থাকুক, দেশটির অভ্যন্তরীণ সংকট এবং জনসাধারণের আস্থা সংকট আরও গভীরতর হয়েছে। অনেকেই বসতি অঞ্চল ছেড়ে পালিয়ে গেছে। যারা রয়ে গেছেন তারাও চরম মানসিক চাপে ভুগছেন।

নেতানিয়াহুর 'শাসক পরিবর্তনের স্বপ্ন' ব্যর্থ

দীর্ঘদিন ধরে নেতানিয়াহু ইরানে ‘শাসক পরিবর্তন’ ঘটানোর স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু এই যুদ্ধ বরং ইরানকে আরও সংহত, আত্মবিশ্বাসী ও প্রতিরোধশীল করে তুলেছে। ইরানি জনগণ এই যুদ্ধকে জাতীয় অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখছে।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের সাম্প্রতিক এই অধ্যায় ইসরায়েলের জন্য এক দুঃস্বপ্নের মতো। যেখানে আক্রমণকারী শক্তি হিসেবে তারা কৌশলগত ও নৈতিক—উভয়ক্ষেত্রেই ব্যর্থ।
আর ইরান? তারা সামরিক, কূটনৈতিক ও জনমতের লড়াইয়ে আপাতত নিজেদের দৃঢ় অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এই ঘটনা নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে—শুধু প্রযুক্তি নয়, কৌশল ও মনোবলই সত্যিকারের শক্তি। (এই প্রতিবেদনটি তেহরান টাইমস অবলম্বনে তৈরি।)

ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর