শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

গাজার সেই ক্যাফেতে হামলায় ৫০০ পাউন্ডের বোমা ব্যবহার করে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

গাজার সেই ক্যাফেতে হামলায় ৫০০ পাউন্ডের বোমা ব্যবহার করে ইসরায়েল

গাজা উপত্যকায় সমুদ্রতীরবর্তী একটি জনপ্রিয় ক্যাফেতে হামলার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৫০০ পাউন্ডের (২৩০ কেজি) বোমা ব্যবহার করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা একটি বিশাল বিস্ফোরণ তরঙ্গ তৈরি করে এবং বিস্তৃত অঞ্চলে শাপনেল ছড়িয়ে দেয়। গত সোমবার (৩০ জুন) হামলার সময় আল-বাকা নামের ক্যাফেটির একটি শিশুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিল, যেখানে অনেক নারী ও শিশু উপস্থিত ছিলেন। 

বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। 


বিজ্ঞাপন


প্রতিবেদনে বলা হয়, আল-বাকা ক্যাফের ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া বোমার টুকরোগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা এটিকে মার্কিন এমকে-৮২ ২৩০ কেজির বোমা হিসেবে শনাক্ত করেছেন। এমকে-৮২ মূলত ৫০০ পাউন্ডের বোমা নামে পরিচিত, যা সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যেকোনো সংঘাতে হামলা জন্য প্রধান বোমা হিসেবে ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

দুই অস্ত্র বিশেষজ্ঞ দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের কারণে তৈরি বিশাল গর্তই প্রমাণ করে সেখানে মার্কিন এমকে-৮২-এর মতো বড় ও শক্তিশালী বোমা ব্যবহার করে হামলা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শিশু, নারী এবং বয়স্ক ব্যক্তিসহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এ ধরনের শক্তিশালী অস্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিতভাবেই বেআইনি এবং এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।


বিজ্ঞাপন


গাজার চিকিৎসা সূত্র ও অন্যান্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্যাফেতে হামলায় কমপক্ষে ৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা, এক সাংবাদিক, ৩৫ বছর বয়সী এক গৃহবধূ এবং চার বছরের একটি শিশুও রয়েছে। আহতদের মধ্যে ১৪ বছর বয়সী এক ছেলে এবং ১২ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।

এদিকে সমালোচনার মুখে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একজন মুখপাত্র দাবি করেছেন, ওই ক্যাফেতে হামলার ঘটনা পর্যালোচনাধীন এবং ‘হামলার আগে, আকাশপথে নজরদারি ব্যবহার করে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল’।

জেনেভা কনভেনশনের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, কোনো সামরিক বাহিনী এমন আক্রমণ চালাতে পারে না, যেখানে সামরিক লাভের তুলনায় বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির সংখ্যাই বেশি হবে। কোন মাত্রা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হবে তা বিশদ আলোচনার বিষয়। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, যে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস হলে পুরো সংঘাতের গতিপথে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, কেবল তেমন লক্ষ্যবস্তুর ওপর হামলায় নিহত হলেই বেসামরিক মানুষের মৃত্যুকে ন্যায্যতা দেওয়া সম্ভব হতে পারে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গেরি সিম্পসন বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ঠিক কাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তা নির্দিষ্ট করেনি, তবে বলেছে যে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমাতে তারা আকাশপথে নজরদারি ব্যবহার করেছে। যার অর্থ তারা জানত যে, ক্যাফেটিতে তখন (হামলার সময়) গ্রাহকদের ভিড় ছিল।’ 
 
তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এটাও জানত যে আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা ওই বোমায় সেখানকার অনেক বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং পঙ্গু হয়ে যাবেন। স্পষ্টতই জনাকীর্ণ একটি ক্যাফেতে এত বড় অস্ত্রের ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। এটি একটি বেআইনি, অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা নির্বিচার আক্রমণ। এ ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্ত করা উচিত।’

ডাবলিন সিটি ইউনিভার্সিটির মানবাধিকার আইনের সহকারী অধ্যাপক ড. অ্যান্ড্রু ফোর্ড বলেন, ‘হামলাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। যখন আপনি এমন পরিস্থিতি দেখেন যেখানে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে একটি জনাকীর্ণ বেসামরিক স্থানে... তখন অবশ্যই একটি নির্বিচার ফলাফল তৈরি হবে যা... জেনেভা কনভেনশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’

জানা গেছে, পারিবারিক ভাবে পরিচালিত আল-বাকা ক্যাফেটি প্রায় ৪০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।গাজা শহরের তরুণদের মধ্যে এবং পারিবারিক আয়োজনের জন্য একটি জনপ্রিয় বিনোদনের স্থান হিসেবে সুপরিচিত ছিল। সেখানে শুধু কোমল পানীয়, চা এবং বিস্কুটের মতো সাধারণ খাবার পরিবেশন করা হত।

 

এমএইচআর

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর