মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন কর ও ব্যয় হ্রাস সংক্রান্ত তথাকথিত ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ নিয়ে আবারও তীব্র সমালোচনা করেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক। একই সঙ্গে বিতর্কিত বিলটি কংগ্রেসে অনুমোদিত হলে ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
সোমবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মাস্ক লেখেন, ‘এই বিলের আওতায় পাগলাটে খরচের কারণে ঋণের পরিমাণ বেড়ে রেকর্ড ৫ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। এতেই স্পষ্ট হয় যে আমরা এখন একটা একদলীয় দেশে বসবাস করছি, যেটাকে বলা যায় ‘পোর্কি পিগ পার্টি!’ এখন এমন একটা নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার সময় এসেছে, যারা সত্যি করে মানুষের কথা ভাববে।’
বিজ্ঞাপন
আরেক পোস্টে মাস্ক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি এই পাগলামিপূর্ণ ব্যয় বিল পাস হয়, তাহলে পরদিনই “আমেরিকা পার্টি” গঠিত হবে।’
তার মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এখন ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান বাইরে একটি বিকল্প দল দরকার, যাতে জনগণের আসল কণ্ঠস্বর শোনা যাবে।’
পৃথক একটি পোস্টে এই ধনকুবের আরও বলেছেন, যেসব কংগ্রেস সদস্য সরকারের খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, আর পরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঋণ বৃদ্ধির প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাদের উচিত লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকা! আর আমি যদি এই পৃথিবীতে আমার শেষ কাজ হিসেবেও কিছু করি, তাহলেও নিশ্চিত করব তারা যেন আগামী বছর প্রাথমিক বাছাইয়ে হেরে যান।’
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০২৪ সালের জুলাই থেকে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা তহবিলে কমপক্ষে ২৩৯ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দিয়েছেন মাস্ক। নির্বাচনে জয়ী হয়ে শপথ নেওয়ার পর সরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন করতে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ) নামের একটি দপ্তর খোলেন ট্রাম্প। সেই দপ্তরের প্রধান করা হয় মাস্ককে।
বিজ্ঞাপন
মাস্ক ডজের প্রধান নির্বাহী হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, স্থগিত করা হয় প্রায় সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা প্রদান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একাধিক আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মাস্কের নিয়োগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। কংগ্রেস এখনও ডজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মাস্কের। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে নতুন তিক্ততার সৃষ্টি হয় ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে। অবশেষে সরকারি বিল নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে বর্তমান ডজ তথা মার্কিন প্রশাসন থেকে বিদায় নেন মাস্ক। তবে এর পরও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ট্রাম্পের এই বিল নিয়ে তিনি একমত নন।
এদিকে প্রায় ১০০০ পৃষ্ঠার এই খসড়া বিল নিয়ে সিনেটররা এখনও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্প চান বিলটি ৪ জুলাইয়ের মধ্যে পাস করানো হোক। কিন্তু অনেক রিপাবলিকান সদস্যই এর মধ্যে থাকা বিপুল ব্যয়ের বিষয় ও কর ছাড়ের যৌক্তিকতা নিয়ে চিন্তিত।
-এমএইচআর