গাজা উপত্যকায় সোমবার দিনভর ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় কমপক্ষে ৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নারী, শিশু, সাংবাদিকসহ বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এই হামলাগুলো এমন এক সময় ঘটেছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় নতুন যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল পৌঁছেছে ওয়াশিংটনে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সোমবার গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে। শুধু গাজা শহরেই নিহত হন অন্তত ৬২ জন।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলি নৌবাহিনী গাজা শহরের একটি সৈকতসংলগ্ন ক্যাফেতে হামলা চালায়, যেখানে বাস্তুচ্যুত মানুষ ও সাংবাদিকরা ইন্টারনেট ব্যবহার এবং বিশ্রামের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। এতে অন্তত ৩০ জন নিহত হন এবং আহত হন আরও অনেকে।
আল-আকসা হাসপাতালে আবারও হামলা
গাজা কেন্দ্রের দেইর আল-বালাহ এলাকায় আল-আকসা শহীদ হাসপাতালের আঙিনায় বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্রে চালানো আরেকটি হামলায় আহত হন অনেকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার আগে কোনো ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়নি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, হাসপাতালটি ইতিপূর্বেও একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে। সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম বলেন, ‘এই হামলা চিকিৎসা অবকাঠামোর ওপর ধারাবাহিক আঘাতের অংশ।’
গাজা প্রশাসনের এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘স্বাস্থ্য খাতের ওপর পদ্ধতিগত অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন—
ত্রাণকেন্দ্রে হামলায় নিহত ১৫
এছাড়া দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এসব ত্রাণকেন্দ্র পরিচালনা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)।
হা-আরেত্জ পত্রিকা জানায়, গাজায় মোতায়েন সেনাদের এমনকি নিরস্ত্র জনগণের ওপরও গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমটি কিছু সেনার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ‘যারা কোনো হুমকি ছিল না, তারাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’
বাস্তুচ্যুতি বেড়েই চলেছে
ইসরায়েল আবারও গাজার বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ জারি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগেই যেসব এলাকা ধ্বংস করা হয়েছিল, এখন সেগুলোতে আবার বোমাবর্ষণ ও ট্যাংক হামলা শুরু হয়েছে।
‘ঘনঘন বিস্ফোরণে মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। একদিকে শান্তির আলোচনা চলছে, অন্যদিকে চলছে ধ্বংসযজ্ঞ,’ বলেন গাজার বাসিন্দা সালাহ (৬০)।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা এখন হয় ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন, নয়তো সরিয়ে নেওয়ার আদেশ জারি রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় আশাবাদ ও সংশয়
একই সময়ে ইসরায়েলি কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার ওয়াশিংটন ডিসিতে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। কাতার জানিয়েছে, এবার যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় ‘গভীর আগ্রহ’ রয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।’
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান জানিয়েছেন, ‘গত চার সপ্তাহে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসেনি। আমরা যুদ্ধবিরতির পক্ষে কাজ করছি এবং সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
আরও পড়ুন—
চলমান সংকটের অবসান কোথায়?
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রোববার দাবি করেছেন, বর্তমানে জিম্মি থাকা অন্তত ২০ জনকে উদ্ধারের ‘নতুন সুযোগ’ তৈরি হয়েছে।
তবে ফিলিস্তিন ও মিসরের সূত্রগুলো বলছে, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসরের সঙ্গে উভয় পক্ষের যোগাযোগ থাকলেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনার তারিখ নির্ধারণ হয়নি।
এ অবস্থায় গাজার মানুষ প্রত্যাশা করছেন, কূটনৈতিক চেষ্টাগুলো দ্রুত কার্যকর হয়ে বাস্তবেই কিছু শান্তি বয়ে আনবে। অন্যথায়, বোমা ও বন্দুকের শব্দই তাদের জীবনের একমাত্র সঙ্গী হয়ে থাকবে।
সূত্র: আল জাজিরা