ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধ হয়তো যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়েছে। কিন্তু একটি সত্য বিষয় উঠে আসছে, ইরান কেবল আক্রমণ প্রতিরোধই করেনি, পরিস্থিতির মোড়ও ঘুরিয়ে দিয়েছে। ফলে কৌশলগত পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে তেল আবিব ও ওয়াশিংটন।
ইরান এবং ইসরায়েলের দখলদার সরকারের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া খুব বেশি দিন হয়নি। ১৩ জুন ভোরে ইরানের উপর ইসরায়েলি সরকারের আক্রমণাত্মক হামলার মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধ শুরু হয়। যা ১২ দিন স্থায়ী হয়েছিল। বিশ্ব এই সংঘাতের সময় ইরানের অসাধারণ প্রতিরোধের পাশাপাশি ইসরাইলের উপর তেহরানের তীব্র আঘাত প্রত্যক্ষ করেছে।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পশ্চিমা ও আঞ্চলিক বিশ্লেষক বলছেন, ইরানকে এই যুদ্ধের প্রধান বিজয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হলে তা অবাক করার মতো কিছু নয়। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, ইরান কেবল প্রচলিত সামরিক যুদ্ধেই নয় বরং ইসরাইল এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকদের বিরুদ্ধে সফট পাওয়ারের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য বিজয় লাভ করেছে।
সম্প্রতি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাঘচির বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে যে, পশ্চিমা দেশগুলি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং আরব দেশগুলি বিশেষ করে কাতারের ক্রমবর্ধমান তৎপরতার কারণে যুদ্ধবিরতি সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে পূর্বেও ইরানের সাথে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলি সরকারের তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরা হয়েছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এসেছে যে, এই চাপের পেছনে আসলে কী লুকিয়ে ছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য, তিনটি মূল বিষয় বিবেচনায় আনা উচিত। প্রথমত, ইসরায়েলি সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশা করেছিল, ইরান দ্রুত একটি ভাঙনের মুখে পড়বে এবং সরকার পতন ঘটাবে। তবে, তাদের প্রত্যাশার বিপরীতে, ইরান দ্রুত তার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে অধিকৃত অঞ্চলগুলিতে ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করে। এই আক্রমণগুলিকে পশ্চিমা এবং ইসরায়েলি সূত্রগুলি অবৈধ ইসরায়েলি শাসনের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে স্বীকার করেছে। ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক বস্তুগত, মানসিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষয়ক্ষতি সংঘটিত হয়।
এছাড়াও, বিভিন্ন প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সরকারের সামরিক মজুদে উল্লেখযোগ্য হ্রাসের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ফলস্বরূপ, পশ্চিমা এবং ইসরায়েলিরা ইরানের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক অক্ষমতা স্বীকার করে। আর তখনই তারা পিছু হটতে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, ইসরায়েলি সরকার ইরানি জনগণের ঐক্য ও জাতীয় সংহতির ঢেউয়ের মুখোমুখি হওয়ার কথা কল্পনাও করেনি। ইহুদি রাষ্ট্রটি একটি ত্রুটিপূর্ণ বিশ্বাস পোষণ করেছিল যে, তাদের আক্রমণ ইরানে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেবে। ফলে শেষ পর্যন্ত ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত পতন ঘটবে। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি। উল্টো অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তাত্ত্বিক এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থা আগের চেয়ে আরও স্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। জাতীয় ঐক্য কার্যকরভাবে ইরানের জাতীয় শক্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এইভাবে, ইসরায়েলি সরকার এবং তার প্রধান মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে শত্রুতা অব্যাহত রাখাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায় হিসেবে দেখেছে।
তৃতীয়ত, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতি লঙ্ঘন ইসরায়েলি এবং মার্কিন উভয়ের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে মারাত্মকভাবে কলঙ্কিত করেছে। আমরা বিশ্বজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ প্রত্যক্ষ করেছি। ইসরায়েলি এবং তাদের আমেরিকান মিত্রদের কাছে দেখিয়েছি যে, দীর্ঘায়িত যুদ্ধ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের জন্য আরও গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। অতএব তারা মূল্যায়ন করে যে, যুদ্ধের সমাপ্তি তাদের স্বার্থের সঙ্গে আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এসব কারণ একটি স্পষ্ট বার্তা বহন করে- ইরানের ওপর সাম্প্রতিক আক্রমণে দখলদার ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার প্রধানত ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে। সূত্র: মেহর নিউজ
ইএ