শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫, ঢাকা

প্রযুক্তিগত ত্রুটি, নাকি অন্য কিছু

১১ দিন ধরে ভারতে আটকা ব্রিটিশ ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমান নিয়ে বাড়ছে জল্পনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

১১ দিন ধরে ভারতে আটকা ব্রিটিশ ‘এফ-৩৫’ নিয়ে বাড়ছে জল্পনা
ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‘এফ-৩৫বি’ যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তায় ভারতের সিআইএসএফ

এক-দুই করে ১১ দিন ধরে ভারতের দক্ষিণী রাজ্য কেরালার তিরুঅনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫বি লাইটনিং টু’। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানটি কেন ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না ব্রিটিশ নৌবাহিনী? প্রযুক্তিগত ত্রুটি, না কি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনো কারণ? 

‘ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি’র যুদ্ধবিমান ‘এফ-৩৫বি’কে নিয়ে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেরালার তিরুঅনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করা ইস্তক যুদ্ধবিমানটিকে ‘হ্যাঙ্গারে’ (যেখানে বিমান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়) নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে ভারত। কিন্তু এই অনুরোধ খারিজ করে দেয় ব্রিটিশ নৌবাহিনী। তবে এর কোনো যুক্তিসংগত কারণ এখনও দেখায়নি তারা। 


বিজ্ঞাপন


শুধু তা-ই নয়, ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ‘এফ-৩৫বি’ যুদ্ধবিমানের জরুরি অবতরণের কারণ নিয়েও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। যুদ্ধবিমানটি ‘এইচএমএস প্রিন্স অব ওয়েলস’ বিমানবাহী রণতরীর বহরে মোতায়েন ছিল বলে জানা গেছে।

f2

ভারতীয় বার্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেরালা উপকূল থেকে প্রায় ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রিটিশ রণতরী থেকে ওড়ে ‘এফ-৩৫বি’। কিন্তু জ্বালানি কম থাকায় তিরুঅনন্তপুরমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে সেটি।

অন্য একটি সংবাদমাধ্যম আবার দাবি করেছে, শুধুমাত্র জ্বালানি কম থাকার কারণেই যে যুদ্ধবিমানটিকে জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে, এমন নয়। খারাপ আবহাওয়ার কারণে সাহায্য চান ওই যুদ্ধবিমানের পাইলট। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে ভারতীয় বিমান বাহিনী।


বিজ্ঞাপন


ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির ‘এফ-৩৫বি’ একটি যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছিল। এই ধরনের মহড়ার সময় সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেই কারণে আমাদের পক্ষ থেকে সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে।”

সূত্রের খবর, সম্প্রতি ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় এ দেশের নৌবাহিনীর সঙ্গে একটি যৌথ মহড়ায় অংশ নেয় ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’। তারই অংশ হিসেবে আকাশে উড়েছিল ওই ‘এফ-৩৫বি’। 

ফ্লাইট রেডারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কেরালা উপকূলে পৌঁছে বিপদসঙ্কেত দেন সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানের পাইলট। এর পরই বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে তাকে জরুরি অবতরণের অনুমতি দেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

f3

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দু’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্রিটিশ যুদ্ধবিমানটি কেরালা উপকূলে পৌঁছে জরুরি ট্রান্সপন্ডার কোড ‘এসকিউইউএডব্লিউকে ৭৭০০’ প্রেরণ করতে শুরু করে। এটি প্রকৃতপক্ষে একটি বিপদসংকেত। সেটা পেতেই তৎপর হয় তিরুঅনন্তপুরম বিমানবন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা। যুদ্ধবিমানটি অবতরণের পর তাকে বে ৪-এ নিয়ে যাওয়া হয় এবং নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয় আধা-সামরিক বাহিনী ‘সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স’ বা সিআইএসএফ। 

সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে যুদ্ধবিমানটিতে শুধুমাত্র জ্বালানি কম রয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পরে বিষয়টি জটিল হতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, যুদ্ধবিমানটির হাইড্রোলিকে কিছু সমস্যা রয়েছে। যেকোনও যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে এই হাইড্রোলিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ল্যান্ডিং গিয়ার, ব্রেক এবং উড়ার সময় ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করেন পাইলট।

ভারতীয় বিমান বাহিনী সূত্রে খবর, ‘ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি’র বিমানবাহী রণতরী ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’-এর শীর্ষ কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকা যুদ্ধবিমানটিকে পরিদর্শন করেছেন। যুদ্ধবিমানটির ঠিক কোথায় ত্রুটি রয়েছে, সেটা এখনো তাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। 

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিমানটির ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা ব্যর্থ হলে সামরিক পরিবহণ বিমানে করেই ‘এফ-৩৫বি’কে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যেতে হবে। 

এদিকে ব্রিটিশ যুদ্ধবিমানের জরুরি অবতরণ ঘিরে ভারতীয়দের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্ন। মহড়ার সময়ে কম জ্বালানি নিয়ে কেন বিমানবাহী রণতরী ছাড়লেন পাইলট? যুদ্ধবিমানটিকে হ্যাঙ্গারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি’র আপত্তি রয়েছে কেন? হাইড্রোলিকের সমস্যা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে কোথায়?

f5

সামরিক বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, যেকোনো বিদেশি যুদ্ধবিমানের ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আটকে থাকা এমনিতেই বিরল ঘটনা। ‘এফ-৩৫বি’ বিশ্বের অন্যতম দামি এবং উন্নত মানের যুদ্ধবিমান। কোনো রকম ক্যাটাপুল্ট সিস্টেম ছাড়াই বিমানবাহী রণতরী থেকে উড়তে পারে পঞ্চম প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমান। তাই ভারতীয় বিমান বাহিনী একে ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ বললেও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের দাবি, ‘এফ-৩৫বি’কে হ্যাঙ্গারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের আপত্তির নেপথ্যে স্পষ্ট যুক্তি রয়েছে। কোনও অবস্থাতেই তারা যুদ্ধবিমানটির জটিল প্রযুক্তি কাউকে জানাতে দিতে চান না। ফলে খোলা আকাশের নীচে যুদ্ধবিমানটিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন পাইলট। 

ব্রিটিশ হাইকমিশনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা বিমানটি দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করছি এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ।’

মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন’-এর তৈরি এই ‘এফ-৩৫বি’ প্রকৃতপক্ষে একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান। অর্থাৎ, লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত হামলা চালানোর পাশাপাশি নজরদারি বা গুপ্তচরবৃত্তির কাজেও একে ব্যবহার করা যেতে পারে। যুদ্ধবিমানটি ‘স্টেল্‌থ’ শ্রেণির হওয়ায় সহজে একে চিহ্নিত করতে পারে না কোনো রেডার।

f6

‘এফ-৩৫বি’-এর আরও কয়েকটি বৈশিষ্ট রয়েছে। অত্যন্ত ছোট রানওয়েতে একে ওড়ানো সম্ভব। যুদ্ধবিমানটি উল্লম্ব ভাবে অবতরণ করতে পারে। যুদ্ধবিমানটির মূল ভার্সানটির নাম ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’। এর মোট তিন ধরনের মডেল রয়েছে। ‘এফ-৩৫বি’ মূলত বিমানবাহী রণতরীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চম প্রজন্মের এই যুদ্ধবিমানের আনুমানিক দাম ১১ কোটি ডলার। 

সদ্যসমাপ্ত ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’- এর বহুল ব্যবহার করেছে ইহুদি বিমান বাহিনী। এছাড়া মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটো— দেশগুলোকে এটি প্রচুর পরিমাণে বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। যুক্তরাজ্য ছাড়াও নেদারল্যান্ডস এবং ইতালির কাছে রয়েছে এই মার্কিন যুদ্ধবিমান।

সূত্র: আনন্দবাজার

এমএইচআর

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর