মার্কিন ও ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই।
বুধবার কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাঘাই বলেন, ‘আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা নিশ্চিত কারণ স্থাপনাগুলো বারবার আক্রমণের শিকার হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাঘাই বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার আর কিছু বলার নেই, কারণ এটি একটি কারিগরি সমস্যা।’
তিনি আরও বলেন, ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলো এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশ করবে।
গত শনিবার ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান। হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক পোস্টে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র— ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে সফলভাবে হামলা চালিয়েছে। তিনি জানান, হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের সব বিমান ইরানের আকাশসীমা থেকে নিরাপদে ফিরে গেছে।
এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক মূল্যায়নে জানা গেছে, ইরানের বিরুদ্ধে চালানো যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতি কিছুটা সময়ের জন্য থেমে গেলেও, সামগ্রিক সক্ষমতা খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মূল্যায়ন তৈরি করেছে পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি বা ডিআইএ)। একাধিক সূত্র জানায়, এই প্রাথমিক বিশ্লেষণ তৈরি করা হয়েছে ইরানে চালানো মার্কিন হামলার পর ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড পরিচালিত যুদ্ধ-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে।
মূল্যায়নে যুক্ত থাকা দুজন ব্যক্তির বরাতে সিএনএন বলছে, হামলার ফলে ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ধ্বংস হয়নি। এমনকি, বহু সংখ্যক সেন্ট্রিফিউজ এখনও অক্ষত রয়েছে। আরেকটি সূত্র আরও জানায়, হামলার আগে এসব ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, ফলে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ কম। তাদের মতে—এই হামলা ইরানকে সর্বোচ্চ কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিতে পেরেছে, কিন্তু এর চেয়ে বেশি নয়।
অন্যদিকে, রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত এখনও অপসারণ করা হয়নি এবং বেশিরভাগই মাটির গভীরে সুরক্ষিত রয়েছে। যদিও ইরান দাবি করছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি একান্তই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে জ্বালানি উৎপাদনের জন্য।
মার্কিন পক্ষ এখনও হামলার পরিপূর্ণ প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইরানের ভেতর থেকেও বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে করে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত মাত্রা নির্ধারণ করা যায়।
তবে হোয়াইট হাউজ এই গোয়েন্দা মূল্যায়নকে ‘সম্পূর্ণ ভুল’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, এই মূল্যায়ন একটি ‘অতি গোপনীয়’ নথি, যা জনসম্মুখে প্রকাশ করা যায় না। তিনি অভিযোগ করেন, একজন অজ্ঞাত, নিম্নস্তরের এবং ব্যর্থ কর্মকর্তা এই তথ্য ফাঁস করেছেন। তার ভাষায়, এই ফাঁসের উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হেয় করা এবং সফল মিশনে অংশ নেওয়া মার্কিন পাইলটদের অসম্মান করা।
অন্যদিকে বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইরানের পারমাণমিক স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি কথিত গোপন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিরোধিতা করেছেন।
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানকে ‘অবিশ্বাস্য সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি দাবি করেছেন, এই হামলা তেহরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ‘কয়েক দশক’ পিছিয়ে দিয়েছে।
ইরান যদি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আবার আক্রমণ করবে কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘অবশ্যই, কিন্তু আমাদের এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, তাদের এটি করতে অনেক বছর লাগবে।’
এমএইচআর