প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম মেয়র পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কবাসী। সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে ইতিহাস গড়ার পথে রয়েছেন জোহরান মামদানি। বছর তেত্রিশের এই তরুণ ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়েছেন, যা অনেকের কাছে এক চমকপ্রদ ঘটনা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
নির্বাচিত হলে মামদানি হবেন নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। পাশাপাশি, তিনিই হবেন শহরটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রগতিশীল মেয়রপ্রার্থী, যিনি সরাসরি জনগণের দাবি ও দারিদ্র্য সমস্যা নিয়ে লড়াই করছেন।
বিজ্ঞাপন
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০২১ সালে পদত্যাগের পর রাজনীতিতে পুনরায় ফেরার চেষ্টা করছিলেন ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট কুমো। কিন্তু ৩৩ বছর বয়সী মামদানির কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে তাকে। এক ভাষণে কুমো বলেন, “আজকের রাত জোহরানের রাত।”
‘আউটসাইডার’ থেকে নেতৃত্বে
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া জোহরান মামদানি মাত্র সাত বছর বয়সে নিউইয়র্কে আসেন। তাঁর মা বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার (‘সালাম বোম্বে!’, ‘দ্য নেমসেক’), আর বাবা মাহমুদ মামদানি একজন খ্যাতনামা নৃবিজ্ঞানী এবং ‘Good Muslim, Bad Muslim’ বইয়ের লেখক।
২০২০ সালে কুইন্স জেলার প্রতিনিধি হিসেবে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন মামদানি। তখন থেকেই তিনি নিজেকে প্রগতিশীল রাজনীতির কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
অভিনব প্রচার ও সাহসী অবস্থান
প্রচারণায় মামদানি বিভিন্ন ভাষায় ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন—পুরো একটি ভিডিও ছিল উর্দুতে, যেখানে দেখা যায় বলিউডের ক্লিপও। অন্য ভিডিওতে তিনি কথা বলেন স্প্যানিশ ভাষায়। এসবই তাঁর বহুসাংস্কৃতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ও মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সক্ষমতা তুলে ধরেছে।
তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে রয়েছে- নগরবাসীর জন্য বিনামূল্যে বাস চলাচল, সর্বজনীন শিশু পরিচর্যা, ভাড়া বাড়ি স্থগিতকরণ, ধনীদের ওপর নতুন কর আরোপ করে সরকারি গ্রোসারি চালু ইত্যাদি।
রাজনৈতিক মূল্যায়ন
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ট্রিপ ইয়াং বলেন, “নিউইয়র্কের আধুনিক ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় রাজনৈতিক বিস্ময়। এই শহরের ভোটাররা সাহসী, স্পষ্টভাষী নেতাদের চান—যেমন জোহরান মামদানি।”
কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ ও সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, যারা নিজেরাও ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট, তারা মামদানির প্রচারণায় সরাসরি সমর্থন জানিয়েছেন।
নিউইয়র্কে ‘র্যাংকড চয়েস’ পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়ায় চূড়ান্ত ফল আসতে কিছু সময় লাগবে, তবে কুমোর পরাজয় স্বীকার ইতোমধ্যে মামদানিকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয় মানেই প্রায় নিশ্চিত মেয়র হওয়া—এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে জোহরান মামদানির নাম লেখানোর সম্ভাবনা এখন খুবই জোরালো।
ইএ