ইরানের হাতে এখনও বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করতে পারে দেশটি। ফলে ‘খেলা এখনও শেষ হয়নি’— এমন মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র। মঙ্গলবার (২৪ জুন) আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থাকে তিনি এসব কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্যাটেলাইট ছবি এবং বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার আগেই ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু স্থাপনা— ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান থেকে প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম দিয়ে অন্তত ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।
বিজ্ঞাপন
তবে এই ইউরেনিয়াম কোথায় সরানো হয়েছে, তা এখনও অজানা। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, সরিয়ে নেওয়া ইউরেনিয়াম ছিল ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ। এই মাত্রা যদি ৯০ শতাংশে পৌঁছে, তাহলে তা সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে।
স্যাটেলাইট চিত্র এবং বিভিন্ন সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ ‘স্পিরিট’ বোমারু বিমান দিয়ে বাঙ্কার বাস্টার বোমা নিক্ষেপের কয়েকদিন আগেই ইরান ইউরেনিয়াম এবং সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেয়। এসব সরঞ্জাম হয়তো ‘গোপন কোনো স্থানে’ স্থানান্তর করা হয়েছে।
মার্কিন হামলার পরপরই ইরানের ইউরেনিয়ামের বর্তমান অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, বর্তমানে এই ইউরেনিয়াম কোথায় রয়েছে, তারা তা জানেন না।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, ছোট ছোট বিশেষ বাক্সে করে ইউরেনিয়াম ও যন্ত্রপাতিগুলো ট্রাকের মাধ্যমে অন্য কোনো ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই স্থানটি ইসফাহানের কাছাকাছি।
দুইজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্ভবত এটাই ঘটেছে। তবে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জানিয়েছেন, তার বিশ্বাস ইউরেনিয়াম কখনোই ফোরদো থেকে সরানো হয়নি। বরং বোমা হামলার পর এটি এখন হাজার হাজার ফুট ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
এর আগে, ইসরায়েল যখন প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় (যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে), তখন ইরান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, তারা আর পরমাণু বিস্তার-সংক্রান্ত চুক্তিতে আবদ্ধ থাকবে না। তেহরান স্পষ্ট জানায়, তারা এমন একটি কর্মসূচি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হবে না, যা কেবলমাত্র বেসামরিক ব্যবহারের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে।
মার্কিন হামলার পর ইরান জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি চালু রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং হামলার ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখন পর্যালোচনা করছি। সূত্র: এনডিটিভি
এইউ