মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষের আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজমান। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইরানে সামরিক অভিযান পরিচালনার পর এবার ইসরায়েলের পরবর্তী সম্ভাব্য টার্গেট হিসেবে তুরস্কের নাম উঠে আসছে। ইসরায়েলের একটি গোপন নিরাপত্তা রিপোর্ট এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষণে এই উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। বিষয়টি ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ ও উত্তেজনা বাড়ছে।
ইসরায়েলি গোপন রিপোর্টে তুরস্কের নাম
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ইসরায়েলের একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় তুরস্কের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্যমান নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
প্রতিবেদনটিতে সরাসরি উল্লেখ করা হয়-“তুরস্ক সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তারে যে ভূমিকা নিচ্ছে, তা ইসরায়েলের সীমান্ত নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক ভারসাম্যের জন্য উদ্বেগজনক।”
এছাড়া, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে দীর্ঘ পরিসরের হামলা সক্ষমতা, উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি এবং সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
এরদোয়ানের পাল্টা হুঁশিয়ারি
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান এ বিষয়ে এক ভাষণে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইসরায়েল যদি মনে করে গাজায় তারা যা খুশি তাই করবে, তাহলে ভুল করবে। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য যে তুরস্ক, তা আমরা আগেই বুঝে গেছি।”
এরদোয়ানের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোড়ন তোলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্কের এক নতুন ও বিপজ্জনক মোড়।
সিরিয়ায় সংঘাত: তুর্কি ও ইসরায়েলি স্বার্থের সংঘর্ষ
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ায় ইসরায়েল ও তুরস্কের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। তুরস্ক সেখানে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করে আসছে, আর ইসরায়েল ইরানপন্থী ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে আসছে। এই দ্বন্দ্বই তাদের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।
তুরস্কের প্রস্তুতি ও প্রতিরক্ষা জোরদার
তুরস্ক ইতোমধ্যে তার সামরিক বাজেট বাড়িয়েছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন প্রকল্পে নতুন বিনিয়োগ শুরু করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, “তুরস্কের ভূখণ্ড ও সার্বভৌমত্বের ওপর কোনো ধরনের হুমকিকে আমরা কঠোরভাবে জবাব দেব।”
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, দেশটির প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে কোনো দেশ তুরস্কের ওপর আক্রমণ করার কথা চিন্তাও না করতে পারে।
চলমান ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ সপ্তাহে এরদোয়ান মধ্য ও দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন আরও বাড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো দেশের প্রতিরক্ষা শক্তিকে এমনভাবে জোরদার করা, যা আগাম বিপদ মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তুরস্কের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সাআর টুইটারে এরদোয়ানের সমালোচনার জবাবে বলেন, “এরদোয়ানের রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাশা। তিনি নিজ দেশের নাগরিকদের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনে রেকর্ড গড়েছেন।”
উভয় দেশের সামরিক তৎপরতা এবং কূটনৈতিক বক্তব্যগুলো স্পষ্টতই ইঙ্গিত দিচ্ছে—অদূর ভবিষ্যতে একটি নতুন সংঘাতের সূচনা ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথে ফেরা, না হলে মধ্যপ্রাচ্য আবারও একটি নতুন যুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে। —তথ্য সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এপি ও আল-জাজিরা।
ইএ

