ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে জেনেভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এক উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক। এতে অংশ নেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ কূটনীতিকরা। যদিও আলোচনার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল, তবুও বক্তব্যগুলো থেকে বেরিয়ে এসেছে গভীর মতপার্থক্য ও পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বলেছেন, এই যুদ্ধ থামাতে ‘ইউরোপ সাহায্য করতে পারবে না’ তখন ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের ফল নিয়ে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
প্রতীকী সদিচ্ছা, নাকি বাস্তব সমাধান?
ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কাজা ক্যালাস বলেছেন, “আঞ্চলিক উত্তেজনা কারো জন্যই লাভজনক নয়। আলোচনা চালিয়ে যাওয়াই একমাত্র পথ।” এই বক্তব্য ইঙ্গিত করে যে, পশ্চিমা শক্তিগুলো কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে একটি আপসের পথ খুঁজছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এটি কি কেবল সময়ক্ষেপণের কৌশল, নাকি সত্যিকারের সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার ইচ্ছা?
এদিকে ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইসরায়েল ভালো করছে। আমার মনে হয় আপনারা বলতে পারেন ইরান কম ভালো করছে’।
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প জানান, যদিও তিনি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ‘সমর্থন’ করতে পারেন।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে ‘ইউরোপ সাহায্য করতে পারবে না’।
ইরানের কৌশল: আগ্রাসন থামলেই আলোচনা
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ইরান আলোচনায় প্রস্তুত, তবে আগ্রাসন চলতে থাকলে কোনো সংলাপ কার্যকর হবে না। তার ভাষায়, “আগ্রাসন বন্ধ হলেই ইরান এ বিষয়ে বিবেচনা করবে।” এই বক্তব্য ইসরায়েল ও তার মিত্রদের প্রতি কড়া বার্তা—যতদিন হামলা বন্ধ না হবে, ততদিন আলোচনার দরজা খুললেও তাতে প্রবেশের প্রশ্নই আসে না।
পশ্চিমা উদ্বেগ: পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে সতর্কতা
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না।” এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়, পশ্চিমা দেশগুলো এখনো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছে, যদিও ইরান তা শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে। এ নিয়েই মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
ভবিষ্যৎ পথ: সমঝোতা, সংঘাত নাকি স্থবিরতা?
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকটি সংঘাত কমিয়ে আনার একটি কৌশলগত উদ্যোগ হলেও বাস্তব কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো এখনও কঠিন। কারণ, একদিকে যেমন পশ্চিমা দেশগুলো চায় ইরান সংযত থাকুক, অন্যদিকে ইরান মনে করছে, কূটনৈতিক আলোচনার সুযোগ থাকলেও তা আগ্রাসনের ছায়ায় চাপা পড়ে যাচ্ছে।
কূটনীতির এক জটিল মুহূর্ত
জেনেভায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠক কেবল একটি আলোচনার পর্ব নয়, বরং তা মধ্যপ্রাচ্যের জিও-পলিটিক্সে কূটনৈতিক ভারসাম্যের পরীক্ষা। বর্তমান বাস্তবতায় প্রশ্নটি হলো—এই আলোচনা কি সংঘাত প্রশমনের দিকে যাবে, নাকি আরও জটিল সংকটের দিকে নিয়ে যাবে?
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের গতিপথ এখন কূটনৈতিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করছে, তবে সে পথে পৌঁছাতে গেলে উভয় পক্ষকে হতে হবে আরও বাস্তববাদী এবং আন্তরিক। নয়তো এই আলোচনাও থেকে যাবে আন্তর্জাতিক কূটনীতির আরও একটি অনিশ্চিত অধ্যায় হিসেবে। —বিবিসি, আল-জাজিরা-রয়টার্স অবলম্বনে
ইএ

