মধ্যপ্রাচ্যে আবারও ভয়াবহ যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠেছে। সবকিছুর শুরু ইসরায়েলের আগ্রাসন দিয়ে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তারা ইরানের সামরিক ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে বিমান হামলা চালায়। এতে ইরানের বিপুল সংখ্যক সেনা কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও বেসামরিক মানুষ নিহত হন।
এই হামলার পর আর চুপ থাকেনি ইরান। পাল্টা জবাবে ব্যালিস্টিক ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জোরালো হামলা চালায় তেহরান। রাজধানী তেল আবিব, কিরিয়াত গাট, হাইফা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আঘাত হানে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। ইসরায়েলের কথিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ভেদ করে আছড়ে পড়ে গোলা। চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, আগুন ও আতঙ্ক।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের এই আগ্রাসন ও হত্যা-অভিযান নতুন কিছু নয়। ফিলিস্তিনে দীর্ঘদিন ধরে যে নৃশংসতা তারা চালিয়ে আসছে, এবার তার নতুন পর্ব শুরু করেছে ইরানের বিরুদ্ধে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ইসরায়েল এখন আর কেবল একটি রাষ্ট্র নয়—তারা একটি রাষ্ট্রীয় জঙ্গি গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে, যারা সামরিক আধিপত্য ও ভয় দেখিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে দুর্বল করতে চায়।
রোববার রাত ও সোমবার ভোরে ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছে অন্তত ২৪ জন। আহত ৯০-এর বেশি। হাইফার তেল শোধনাগারে বিস্ফোরণের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। সেনারা ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিতদের খুঁজছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করছে, তারা ইরানের ৩০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করেছে। ৫০টি যুদ্ধবিমান দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—ইরান আগের চেয়ে আরও সংঘবদ্ধ হয়ে একের পর এক জবাব দিয়ে চলেছে। তাদের হামলায় দেখা যাচ্ছে যে শীর্ষ কমান্ডার নিহত হলেও কৌশলগত নেতৃত্বে কোনো ঘাটতি নেই।
ইরান এখন পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) থেকেও বেরিয়ে আসার পথে। পার্লামেন্টে এনিয়ে বিল আনা হচ্ছে। ইরান বলছে, তারা আর চাপে মাথা নত করবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতায় যাবে না বলেও জানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, যুদ্ধের আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। পাকিস্তান ইরানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী সব ক্রসিং অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। তেলের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। হরমুজ প্রণালি ঘিরে উদ্বেগ বেড়েছে। ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই তেলের দাম বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধ বাড়লে তেল সরবরাহে বড় বাধা তৈরি হবে—বিশ্ববাজারে দাম আরও বাড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশসহ আমদানিনির্ভর সব দেশ।
যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে তাদের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিটজ পাঠিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিস্থিতি এখন কেবল ইরান-ইসরায়েল সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক ময়দানে।
চীন ও অন্যান্য দেশ শান্তির আহ্বান জানালেও, রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরান যখন সিরিয়ায় রাশিয়াকে সহায়তা দিয়েছিল, এখন বিপদের দিনে সেই রাশিয়া ইরানের পাশে নেই। ফলে ইরান অনেকটাই একা হয়ে পড়েছে। মুসলিম দেশগুলোর নীরবতাও সমালোচিত হচ্ছে।
তবে এসব কিছু সত্ত্বেও, ইরান দাঁড়িয়ে আছে শক্তভাবে। প্রতিরোধের বার্তা দিচ্ছে তারা। বিশ্ববাসী এখন দেখছে, দীর্ঘদিন ধরে যারা মধ্যপ্রাচ্যে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে—তাদের বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়িয়েছে, চোখে চোখ রেখে জবাব দিচ্ছে।
এইউ

