মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু সমালোচনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক।
বুধবার (১১ জুন) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে করা আমার কিছু পোস্টের জন্য আমি দুঃখিত। এগুলো বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।’
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নতুন ‘ব্যয় বিল’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মাস্ক। তিনি এই বিলকে ‘জঘন্য’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং বিলের পক্ষে থাকা রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
তবে ‘ব্যয় বিলের’ পক্ষে ভোট দেওয়া রিপাবলিকানদের শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করলে টেক বিলিয়নিয়ারকে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুমকি দেন ট্রাম্প।
শনিবার এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি পদে থাকা রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জার্সদের তিনি (মাস্ক) অর্থায়ন করেন তাহলে তাকে খুব গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ তবে সেই পরিণতিগুলো কী হবে তা নির্দিষ্ট করে বলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী টেসলা এবং স্পেস-এক্স প্রধানের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনও ইচ্ছা তার নেই, এমনকি তার সঙ্গে কথা বলার কোনও ইচ্ছা নেই।’
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন হুমকি দেওয়ার মাত্র কয়েকদিন পর মাস্কের দুঃখ প্রকাশ করলেন মাস্ক। তবে পোস্টে, ট্রাম্পের প্রতি তার কোন সমালোচনা ‘অতিরিক্ত’ ছিল তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০২৪ সালের জুলাই থেকে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা তহবিলে কমপক্ষে ২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার চাঁদা দিয়েছেন মাস্ক। নির্বাচনে জয়ী হয়ে শপথ নেওয়ার পর সরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন করতে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ) নামের একটি দফতর খোলেন ট্রাম্প। সেই দফতরের প্রধান করা হয় মাস্ককে।
মাস্ক ডজের প্রধান নির্বাহী হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, স্থগিত করা হয় প্রায় সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা প্রদান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একাধিক আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মাস্কের নিয়োগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। কংগ্রেস এখনও ডজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মাস্কের। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে নতুন তিক্ততার সৃষ্টি হয় ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে। অবশেষে সরকারি বিল নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে বর্তমান ডজ তথা মার্কিন প্রশাসন থেকে বিদায় নেন মাস্ক। এরপর সম্প্রতি দুজনের মধ্যে প্রকাশ্য মতবিরোধ দেখা দেয়।
এমএইচআর/এমএইচটি