এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ও সরকারি ব্যয় হ্রাসে গঠিত ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ)’ এর সাবেক প্রধান ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসে মাদক গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে নীরবতা ভাঙলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, মাস্ক হোয়াইট হাউসে অবৈধ মাদক নিয়েছিলেন কিনা—তা তিনি নিশ্চিত নন, তবে ‘আশা করেন’ তিনি তা করেননি।
বিজ্ঞাপন
মাস্ক এত বেশি কেটামিন (একটি শক্তিশালী চেতনানাশক) ব্যবহার করেছেন, যে তার মূত্রাশয়ের সমস্যা দেখা দিয়েছে— নিউ ইয়র্ক টাইমসের এমন প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে সোমবার (৯ জুন) সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সত্যিই জানি না। আমার মনে হয় না। আমি চাইও না সেটা সত্য হোক।’
ট্রাম্প আরও জানান, তার সঙ্গে ধনকুবের ইলন মাস্কের সম্পর্ক ‘ভালো’ ছিল, যিনি তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে প্রায় ২৭৫ মিলিয়ন ডলার দান করেছিলেন।
৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তার মঙ্গল কামনা করি। খুব ভালোভাবেই কামনা করি।’
প্রসঙ্গত, ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতার শুরু ২০২৪ সালের জুলাই থেকে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা তহবিলে কমপক্ষে ২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার চাঁদা দিয়েছেন মাস্ক। নির্বাচনে জয়ী হয়ে শপথ নেওয়ার পর সরকারি কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সরকারি ব্যয় সংকোচন করতে ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ) নামের একটি দপ্তর খোলেন ট্রাম্প। সেই দপ্তরের প্রধান করা হয় মাস্ককে।
বিজ্ঞাপন
মাস্ক ডজের প্রধান নির্বাহী হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে সরকারি অর্থ অপচয় রোধের নামে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়, স্থগিত করা হয় প্রায় সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা প্রদান, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থাতেও সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা কমতে থাকে ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একাধিক আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চাকরিচ্যুত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মাস্কের নিয়োগ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের এমপিদের একাংশ এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা-কর্মীদের একাংশ অসন্তুষ্ট ছিলেন। কংগ্রেস এখনও ডজকে সরকারি বিভাগ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল মাস্কের। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক একটি বিল স্বাক্ষরকে ঘিরে নতুন তিক্ততার সৃষ্টি হয় ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে। অবশেষে সরকারি বিল নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে বর্তমান ডজ তথা মার্কিন প্রশাসন থেকে বিদায় নেন মাস্ক।
এরপর সম্প্রতি দুজনের মধ্যে প্রকাশ্য মতবিরোধ দেখা দিলেও মাস্কের মাদক সেবন নিয়ে এটিই ট্রাম্পের সবচেয়ে স্পষ্ট মন্তব্য।
মূলত মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রচার অভিযানে মাস্ক ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার সময় তিনি কেটামিন, এক্সট্যাসি ও সাইকেডেলিক মাশরুম সেবন করেন। গত এক বছরে মাস্কের মাদক সেবনের মাত্রা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যায় এবং তিনি নিয়মিত একটি ওষুধের বাক্স বহন করতেন, যাতে ছিল প্রায় ২০টি ট্যাবলেট, যার মধ্যে অ্যাডেরাল নামক স্টিমুল্যান্টও ছিল বলে দাবি।
এদিকে গত শনিবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক প্লাটফর্ম এক্সে- এক পোস্টে মাস্ক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে লেখেন, ‘স্পষ্ট করে বলি—আমি মাদক সেবন করছি না! নিউইয়র্ক টাইমস পুরোপুরি মিথ্যা বলছে।’
তিনি আরও জানান, ‘কয়েক বছর আগে “প্রেসক্রিপশন কেটামিন” নিয়েছিলাম, এবং সেটি আমি এক্স–এ জানিয়েছিলামও। তাই এটা নতুন কোনো খবর নয়। এটা গভীর মানসিক অন্ধকার থেকে বের হতে সাহায্য করে। কিন্তু এরপর আর তা নেইনি।’
এর আগেও মাস্ক স্বীকার করেছিলেন, তিনি মানসিক নেতিবাচকতা দূর করতে চিকিৎসকের পরামর্শে কেটামিন নিয়েছিলেন এবং তার মতে, ওষুধ ব্যবহারের ফলে তার কাজে উপকার হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি
এমএইচআর/এমএইচটি