ভারতের উত্তর সিকিমের ছাতেন এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি শিবিরে রোববার (১ জুন) রাতে প্রবল ভূমিধসের ঘটনায় তিনজন ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আরও ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।
ভূমিধসে আহত চারজন সেনা সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ছয়জনকে খুঁজে বের করার জন্য উদ্ধার অভিযান চলছে।
বিজ্ঞাপন
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন হাবিলদার লাখবিন্দর সিং, ল্যান্স নায়েক মুনিশ ঠাকুর এবং পোর্টার অভিষেক লাখাড়া।
এই ভূমিধসের সূত্রপাত হয় প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে, যা রোববার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মংগন জেলার লাচেন এলাকার কাছে শুরু হয়।
এর আগে গত কয়েকদিন ধরেই সিকিমে একটানা প্রবল বৃষ্টি চলছে, তিস্তার জলোচ্ছ্বাসে মংগনে ওই নদীর ওপর একটি সেতু জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে উত্তর সিকিম কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার ফলে লাচেং, লাচুন-সহ উত্তর সিকিমের জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলোতে শত শত পর্যটক আটকা পড়েছেন।
তিস্তার জলোচ্ছ্বাস নদীর ভাঁটির এলাকা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেও অবধারিতভাবে প্রভাব ফেলবে, এজন্য সেখানেও সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে আজ সোমবার (২ জুন) উত্তর সিকিমের লাচুং শহর থেকে গত ৩০ মে থেকে আটকে পড়া ১০০ জনেরও বেশি পর্যটককে উদ্ধার করে দজংগুর ফিডাং এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।
তারা ছিলেন সেই ১৬০০রও বেশি পর্যটকদের দলে, যারা ভারী বৃষ্টিপাতজনিত ভূমিধস এবং নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে লাচুং এলাকায় আটকে পড়েছিলেন।
আরও একটি পর্যটকদের দল, যার মধ্যে ১৬৭৮ জন ছিলেন, তারা ফিডাংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলেও পিটিআই জানিয়েছে।
অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও ওই অঞ্চলে মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর জলস্তর এখনও বিপদসীমার ওপরে, যার ফলে উত্তর সিকিমের অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) সতর্কবার্তা জারি করে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের ‘অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ’ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে, সম্ভব হলে ঘরে থাকার এবং নদীতীর ও ভূমিধসপ্রবণ এলাকা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) পশ্চিমবঙ্গে এসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে তার সেদিন সিকিমেও যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে সেই সফর বাতিল করতে হয়। বস্তুত সেইদিন থেকেই পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল সিকিমের, আবহাওয়াও ছিল অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ।
শনিবার (৩১ মে) উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় ধস নামে এবং তার জেরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সিকিমের সাত মাইলের মধ্যে নামচি জেলার লেগশিপ ও কিউজিংয়ের মাঝেও ধস নেমেছে। মংগন জেলাতে এখনও লাল সতর্কতা জারি রয়েছে।
আটক পর্যটকদের উদ্ধার করতে তৎপর রয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনী। পর্যটকদের উপদ্রুত এলাকা থেকে সরিয়ে আনতে বিকল্প পথ এবং উপায় খুঁজছে প্রশাসনও। পর্যটকদের উদ্ধারে প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন লাচুং হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরাও।

উত্তর সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকায় রোববার রাত পর্যন্ত ব্যাপক বৃষ্টি হলেও সোমবার সকালে অনেক জায়গাতেই রোদের দেখা মিলেছে। তারপরেই উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, প্রশাসনের পাশাপাশি উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় লাচুংপা সম্প্রদায়ের মানুষজনও। এই সম্প্রদায়ের অনেক মানুষই স্থানীয় হোটেলের মালিক।
সোমবার সকালে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হতেই তাদের অনেকে আটকে থাকা পর্যটকদের ব্যাগ বয়ে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে তোলেন।
উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়েন পর্যটকেরা। শনিবার প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছিল, সেই সংখ্যাটা দেড় হাজারেরও বেশি।
সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে আগেই তাদের হোটেল এবং হোমস্টেতে থেকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে উত্তর সিকিমের অনেক জায়গাতেই এখনও বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। চুংথাঙে জলের সমস্যা রয়েছে।

প্রশাসন ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযানে বিঘ্ন ঘটছে।
তিস্তা নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করার কথা ভেবেছে প্রশাসন। তাদের ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কারণ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে ডিকচু, সিংথামের মতো এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রচুর মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলেও প্রশাসন আশঙ্কা করছে।
এরই মধ্যে উত্তর সিকিমের চুংথাং থেকে মুন্সিথাং যাওয়ার রাস্তায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পর্যটকদের একটি গাড়ি। ১১ জন পর্যটক নিয়ে গাড়িটি প্রায় ১২০০ ফুট নীচে তিস্তায় পড়ে যায়।

পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক রাজ্য যেমন: মিজোরাম, আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুরেও প্রবল বৃষ্টির জেরে ধসের কবলে পড়েছে বহু এলাকা। ধসের সঙ্গে বহু জায়গায় বন্যাও দেখা দিয়েছে।
সব মিলিয়ে ওই রাজ্যগুলোতে কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯ জনের মৃত্যুর খবরও সামনে এসেছে।
আইএমডি জানিয়েছে এটাই শেষ নয়, আগামী কয়েকদিনে এর থেকেও খারাপ আবহাওয়া দেখা যাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে।
এফএ