সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ঢাকা

ফের কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা, ‘অপেক্ষায়’ ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২৫, ১২:৩০ এএম

শেয়ার করুন:

Iran-US nuclear talks end with no agreement but ‘possibility of progress’
পঞ্চম দফা আলোচনার পর রোমে অবস্থিত ওমানি দূতাবাস ত্যাগ করছেন ইরানি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। ছবি: রয়টার্স

ইতালির রাজধানী রোমে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পঞ্চম দফার পারমাণবিক আলোচনা শুক্রবার শেষ হয়েছে। এ আলোচনা থেকে কোনো সিদ্ধান্তমূলক অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। তবে আগামী এক দুই বৈঠকে এমন কিছু বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে যাতে আলোচনা চলমান থাকবে।

সর্বশেষ বৈঠক ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা থাকার মধ্যেই আভাস পাওয়া গেল উভয় পক্ষই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ নিয়ে আরও আলোচনার জন্য আগ্রহী।


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই দফার আলোচনা শেষ হলেও পারমাণবিক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। আলোচনা ভেঙে যাওয়ার যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটিও দূর হয়েছে। অর্থাৎ দুই পক্ষই আলোচনা চালিয়ে যাবে।

এই আলোচনা ছিল পরোক্ষভাবে। এতে মধ্যস্থতা করেছে ওমান।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আব্বাস আরাগচি শুক্রবার রাতে বলেছেন,“আমি আশা করি যে পরবর্তী এক বা দুইটি বৈঠকে আমরা এমন কিছু সমাধানে পৌঁছাতে পারব যা আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে। ওমানের দেওয়া সমাধান চুক্তি পৌঁছার বাধা দূর করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। তবে আলোচনা এত জটিল যে এক বা দুইটি বৈঠকে এটি সমাধান করা সম্ভব নয়।”


বিজ্ঞাপন


ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে: “আমরা আশা করি যে আগামী কিছু দিনের মধ্যে বাকি বিষয়গুলো পরিষ্কার করতে পারব, যাতে আমরা একটি টেকসই এবং সম্মানজনক চুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে পারি।”

আলোচনার প্রেক্ষাপট

এই আলোচনা চলাকালে ইসরায়েল বারবার হুমকি দিয়েছে যে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা করতে পারে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে শঙ্কা প্রকাশ করছে যে, ইরান একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং তারা যা দাবি করছে তা শুধুমাত্র একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং গালফ রাষ্ট্রগুলোর তরফে ইসরায়েলের পারমাণবিক হামলার সম্ভাবনা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। গালফ দেশগুলো মনে করে, ইসরায়েলের কোনো আক্রমণ ইরানের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে আরও একটি সংঘর্ষের সূচনা করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই প্রেক্ষাপটে ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে কিছুটা প্রস্তুত বলে উল্লেখ করেছেন।

ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল যে, এটি একটি লাল রেখা যে ইরানকে তার দেশীয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির কর্মসূচি চালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। তবে ইরান দাবি করেছে যে, পারমাণবিক বিস্তার রোধ চুক্তির (NPT) সদস্য হিসেবে তাদের এই কর্মসূচি চলমান রাখা আইনগত অধিকার। ইরান তার ইউরেনিয়াম মজুতের আকার এবং বিশুদ্ধতা সীমিত করার প্রস্তাব দিয়েছে।

ইরান অন্যদের মতো ইউরেনিয়াম আমদানি করে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করার পক্ষে ছিল না। কারণ তারা দাবি করেছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং এটি একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি। এছাড়া, তারা উল্লেখ করেছে যে, ইসরাইলের কাছে অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র তার কাছে এটি বন্ধ করার দাবি জানায় না।

সম্ভাব্য সমাধান

কিছু মধ্যস্থতাকারী এমন একটি বিকল্প প্রস্তাব করেছেন যে, ইরান একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তার ইউরিয়ামের সমৃদ্ধি স্থগিত রাখতে পারে, অথবা ইরান সৌদি আরবের সঙ্গে একটি পারমাণবিক কনসোর্টিয়াম গঠন করতে পারে, যাতে তাদের দেশীয় কর্মসূচি সম্পর্কে আরও আস্থা ও জ্ঞান পাওয়া যাবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আলোচক স্টিভ উইটকফ অজ্ঞাত কারণে বৈঠক থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান বৈঠকের পর কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। বৈঠকের আগে, উইটকফ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এর মধ্যে মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নিয়াও ছিলেন, যিনি আগের আলোচনার সময়ও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA) থেকে বের হয়ে যায়। এর পর থেকে ইরান তার পরমাণু কার্যক্রম পুনরায় চালু করে এবং অন্যান্য বিশ্ব শক্তি-এর সাথে পারমাণবিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেছিল। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তির বিরোধিতা করেছিল, যা সম্পর্কের তিক্ততার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে, রোমে এই আলোচনাটি বিশ্ব শক্তিগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এবং ইরানের পরমাণু কার্যক্রম সংক্রান্ত বিশদ আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে।

ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর