মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে বসবাসরত এক সমকামী দম্পতি—ডরিস ডেভিস ও সুজি বার্টলেট—একটি জীবন পরিবর্তনকারী সিদ্ধান্ত নেন। যদি ট্রাম্প জয়ী হন, তবে তারা বিদেশে চলে যাবেন।
এই দম্পতি জানান, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তারা তাকে একটি সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ্য করেন, তিনি ফের ক্ষমতায় এসে বর্ণ বৈষম্য ও এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকার সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতি বাতিল করেন।
বিজ্ঞাপন
৬৯ বছর বয়সী শিক্ষাবিষয়ক পরামর্শক ডেভিস বলেন, ‘আমরা এই দেশকে ভালোবাসি, কিন্তু এখনকার আমেরিকাকে আমরা ভালোবাসি না।’
ডেভিস আরও বলেন, ‘যখন আপনার পরিচয়কে আক্রমণ করা হয়, তখন তা ব্যক্তিগতভাবে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়।’
বর্তমানে তারা ইউরোপে যাওয়ার বিকল্পগুলো যাচাই করতে একজন ইমিগ্রেশন আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করছেন। তারা মূলত পর্তুগাল ও স্পেনে আগ্রহী—দক্ষিণ ইউরোপীয় জীবনধারা তাদের আকৃষ্ট করছে, এবং তারা ডিজিটাল নোম্যাড বা অবসরের ভিসা বিবেচনা করছেন। বার্টলেট, যিনি ৫২ বছর বয়সী, অবসরপ্রাপ্ত।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় কমিউনিটিকে ছেড়ে যেতে দুঃখ হচ্ছে জানিয়ে ডেভিস বলেন, ‘আমার যেতে খারাপ লাগছে।’
এই শিক্ষাবিষয়ক পরামর্শক বলেন, ‘কিন্তু রাজনীতি ও সামাজিক পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা অগ্রহণযোগ্য।’
সরকারি ভিসা ও নাগরিকত্ব সংক্রান্ত তথ্য এবং রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা আটটি রিলোকেশন প্রতিষ্ঠানের মতে, ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের বহু নাগরিক ইউরোপে যাওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছেন—যদিও ৩৪ কোটির দেশের তুলনায় সংখ্যা এখনো তুলনামূলকভাবে কম।
আইরিশ পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম দুই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইরিশ পাসপোর্টের আবেদন ছিল এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে গড় মাসিক আবেদন প্রায় ৪৩০০, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি।
ফরাসি সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের করা লং-স্টে ভিসা আবেদনের সংখ্যা ছিল ২৩৮৩, যেখানে গত বছর একই সময়ে তা ছিল ১৯৮০। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ফ্রান্স ২১৭৮টি লং-স্টে ভিসা অনুমোদন দিয়েছে, যা গত বছরের ১৭৮৭টির তুলনায় বেশি।
আর যুক্তরাজ্যে ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে পাসপোর্ট আবেদন ছিল গত দুই দশকের যেকোনো ত্রৈমাসিকের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ, যা ১৭০৮টি।
রিলোকেশন কোম্পানি ও অভিবাসন সহায়তাদানকারী ওয়েবসাইটগুলো জানায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক আমেরিকান বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে, যার পেছনে রাজনৈতিক বিভাজন ও বন্দুক সহিংসতার মতো কারণ রয়েছে।
ইতালিয়ান ইমিগ্রেশন পরামর্শক ও ‘ইটালিয়ান সিটিজেনশিপ অ্যাসিস্ট্যান্স’ এর প্রতিষ্ঠাতা মার্কো পারমুনিয়ান জানান, ২০২০ সালে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পরেও অনেকে অভিবাসনের আগ্রহ দেখিয়েছেন, তবে সে সময় মূলত রিপাবলিকান ভোটাররাই বেশি আগ্রহী ছিলেন।
তবে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা বেশিরভাগ রিলোকেশন সংস্থা বলেছে, ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর আগ্রহের পরিমাণ আরও বেশি বেড়েছে। অনেক গ্রাহকই নীতি ও সামাজিক বিষয়ে দিক পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
সূত্র: রয়টার্স।
এমএইচটি

