কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনায় তীব্র চাপে পড়েছে ভারতের স্থানীয় প্রশাসন। হামলার আগেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল—এমন তথ্য সামনে আসায় বিষয়টি ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক।
ভারতীয় গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) ও অন্যান্য সংস্থা ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্ধারিত সফরকে কেন্দ্র করে হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল। গোয়েন্দা বার্তায় শ্রীনগর ও আশপাশের এলাকার কথা বলা হয়েছিল, তবে সরাসরি পহেলগামের নাম উল্লেখ ছিল না। যদিও শেষ পর্যন্ত মোদির সেই সফর বাতিল হয়।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু সফরের চার দিন পর, ২২ এপ্রিল পহেলগামে ঘটে ভয়াবহ হামলা। নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে থাকা একটি পর্যটন এলাকায় চালানো এই হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন। হামলায় বিদেশি ও স্থানীয়, দুটি করে জঙ্গি গোষ্ঠীর জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে— স্থানীয় জঙ্গিরা প্রথমে পর্যটকদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো করে। এরপর বিদেশি হামলাকারীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। বৈসারান উপত্যকার সেই জায়গায় একমাত্র প্রবেশপথ ও টিকিটিং ব্যবস্থার কারণে কেউ বের হতে পারেননি। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার ভাষায়, “মানুষ পালাতে পারেননি, সেটাই সবচেয়ে কষ্টের।”
হামলার পর থেকেই এলাকাজুড়ে টানটান উত্তেজনা। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, হামলাকারীরা এখনো স্থানীয় এলাকায় লুকিয়ে আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চলছে।
এদিকে, এই ঘটনার পর ভারত পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। নয়াদিল্লি বেশকিছু কড়া পদক্ষেপও নিয়েছে—সিন্ধু নদীচুক্তি স্থগিত, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক বিবৃতিতে বলেন, “ভারত যদি সিন্ধু নদে কোনো নির্মাণ কাজ করে, তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।” তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে ‘নাটক মঞ্চস্থ করার’ অভিযোগও তুলেছেন।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেছে রাশিয়া। মস্কোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যেন শান্তিপূর্ণভাবে মেটানো হয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ফোনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিমলা চুক্তি ও লাহোর ঘোষণার আওতায় শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানান।
এই মুহূর্তে পুরো উপত্যকাজুড়ে সতর্কতা জারি রয়েছে। তবে গোয়েন্দা সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও এই হামলা কেন ঠেকানো যায়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। সূত্র: দ্য হিন্দুস্তান টাইমস
এইউ

