সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সদস্য পদ প্রাপ্তির পথে প্রধান বাঁধা তুরস্ক। দেশ দুটি ‘সন্ত্রাসবাদে’ মদদ দিয়ে আসছে অভিযোগ তুলে তাদের ন্যাটো সদস্য পদ আটকে দিয়েছে আঙ্কারা। আর তুরস্কের যুক্তির পেছনে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন আমিনেহ কাকাবাভেহ।
সুইডিশ আইন প্রণেতা আমিনেহ কাকাবাভেহ, একজন প্রাক্তন কুর্দি যোদ্ধা। সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের ঐতিহাসিক জল্পনা-কল্পনার কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
এরদোয়ানের সমালোচক
সাবেক কুর্দি যোদ্ধা আমিনেহ কুর্দিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের পক্ষে বেশ সরব। এছাড়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের একজন তীব্র সমালোচক হিসেবে পরিচিত আমিনেহ পেশায় একজন আইনজীবী।
বিভিন্ন সময়ে কুর্দি যোদ্ধাদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত হন তিনি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কুর্দিদের আশ্রয়ের বিষয়েও তাকে অনন্য ভূমিকায় দেখা যায়।
তুরস্কের রাষ্ট্রপতি যখন সুইডিশ পার্লামেন্টে ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তখন আমিনেহ কাকাবাভেহ নিশ্চিত হন যে তিনি (এরদোয়ান) তার (আমিনেহ) সম্পর্কে কথা বলছেন। শত বাঁধা বিপত্তি সত্ত্বেও এরদোয়ানের সমালোচনায় অটল রয়েছেন তিনি।
সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানে এরদোয়ান প্রদত্ত ভেটোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘তিনি আমাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আমি সুইডেনের মূল্যবোধ এবং সুইডেনের সার্বভৌমত্বের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।’’
সুইডিশ সরকারের অস্বস্তি?
আমিনেহ কাকাবাভেহর ওপর দেশটির ক্ষমতাসীন দল পুরোপুরি নির্ভরশীল। কারণ সুইডিশ সরকার সংসদে তার এক আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর ভর করে সরকার গঠন করেছে। কাকাবাভেহের সমর্থনই গত বছর সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক নেতা ম্যাগডালেনা অ্যান্ডারসনকে সুইডেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুমতি দেয়। বিনিময়ে, মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা উত্তর সিরিয়ার কুর্দি কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতা গভীর করতে সম্মত হয়েছে।
তবে এ নিয়ে অস্বস্তিও রয়েছে দেশটির রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মাঝে। স্টকহোমের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নীতি ইন্সটিটিউটের পরিচালক সোয়ান্তে কর্নেল জানান, ‘‘আমরা সংসদের একক সদস্যদের এই ধরনের প্রভাবে অভ্যস্ত নই। আপনি বলতে পারেন, এটি সরকারের পক্ষে সর্বাধিক দুর্ভাগ্য।’’
তবে দৃঢ় চিত্তের আমিনেহ এমন সব সঙ্কটকে অতিক্রমের স্পৃহা রাখেন। ৪৮ বছর বয়সী কাকাবাভেহ বলেন, ‘‘এটি একটি ভয়ানক পরিস্থিতি। কিন্তু আমি এক কোণে বসে বলতে চাই না, 'আমি ভয় পাচ্ছি। আমি আমার পরিবার, আমার শৈশব, আমার যা কিছু ছিল, সব ছেড়ে দিয়েছি। আমি যা বিশ্বাস করি তার জন্য।’’
উল্লেখ্য, কুর্দি জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ এনে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের ন্যাটো সদস্যতার বিরোধিতা করে আসছে তুরস্ক। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছিলেন, সুইডেনের আশা করা উচিত নয় যে ‘সন্ত্রাসীদের’ ফিরিয়ে না দিলে তাদের ন্যাটো জোটে যোগদানের বিষয়টি তুরস্ক সমর্থন করবে। একই সঙ্গে সুইডিশ এবং ফিনিশ প্রতিনিধিদের জোটে তাদের সদস্যপদ সমর্থন করার জন্য তুরস্ককে রাজি করাতে আঙ্কারায় আসাও উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তুরস্কের ওয়ান্টেড তালিকার অনেক ব্যক্তি ও পিকেকের (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি) নেতাদের অনেককে আশ্রয় দিয়েছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। তারা তাদেরকে তুরস্কে ফিরিয়ে দিতেও অস্বীকার করে আসছে। এই কারণে তুরস্ক শুরু থেকেই বলে আসছে যে, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন তুরস্কের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করছে।
সূত্র: এপি
টিএম