কাশ্মীরের পেহেলগামের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর, ভারতজুড়ে মুসলিমবিরোধী হিংসাত্মক মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। হামলার পরপরই দেশটিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক উস্কানিমূলক গান ছড়িয়ে পড়েছে, যা মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও সহিংসতা উসকে দিচ্ছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— ‘হিন্দুত্বা’ পপ নামে পরিচিত এই গানের ধরন হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও বিদ্বেষমূলক বার্তা প্রচারে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই গানে মুসলিমদের দেশদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং তাদের দেশ ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। ‘পহলে ধরম পোঁছা’ শিরোনামের একটি গানে বলা হচ্ছে, ‘আপনার নিজস্ব দেশ ছিল, তাহলে এখানে কেন থাকলেন?’ এই গানটি ইউটিউবে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি ভিউ পেয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সহিংসতা ও হুমকি
ভারতে ছড়িয়ে পড়া এসব গানের মাধ্যমে মুসলিমদের ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিশোধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। অপর দিকে ‘অব এক নাহি হুয়ে তো কাট জাবে’— শিরোনামের একটি গানে হিন্দুদের একত্রিত হয়ে নিজেদের ধর্ম রক্ষার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই গানটি ইউটিউবে দুই দিনে ৬০ হাজারের বেশি ভিউ পেয়েছে।
এই গানের ধরন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রতিফলন। এই সংগঠনগুলো সোশ্যাল মিডিয়া ও এনক্রিপ্টেড প্ল্যাটফর্ম যেমন— হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও বিভাজন সৃষ্টি করছে। এই গানের মাধ্যমে মুসলিমদের ‘শত্রু’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যা সমাজে আতঙ্ক ও অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
বাস্তব সহিংসতা, সরকার ও নাগরিক প্রতিক্রিয়া
গানগুলোর পাশাপাশি, ভারতজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হুমকি বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র ও উত্তরাখণ্ডে মুসলিমদের ওপর হামলা ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কাশ্মীরি মুসলিমদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, রাস্তার দোকানদারদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে এবং মুসলিম রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে।
কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই বিদ্বেষমূলক গানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং, বিজেপির কিছু নেতা মুসলিমদের বয়কটের আহ্বান জানাচ্ছেন। উত্তর প্রদেশের এক মন্ত্রী মুসলিমদের অর্থনৈতিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া, বিজেপির কিছু নেতা ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজনের নামে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এদিকে এই সহিংসতা ও বিদ্বেষমূলক গানের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংগঠনগুলো ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা সরকারের কাছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই ধরনের বিদ্বেষমূলক গানের মাধ্যমে সমাজে বিভাজন ও সহিংসতা বৃদ্ধি পাবে। তারা সরকারের কাছে এই ধরনের গানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।সূত্র: আল-জাজিরা
এইউ

