শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

দেশে দেশে যেভাবে উদযাপিত হয় বর্ষবরণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। বাঙালি জীবনের অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন একটি উৎসব হলো পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বের বাঙালিদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। উৎসবটি বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটিকে চিহ্নিত করে, যা সাধারণত প্রতি বছর এপ্রিলের ১৪ বা ১৫ তারিখে পড়ে। ‘পহেলা’ শব্দের অর্থ ‘প্রথম’ এবং ‘বৈশাখ’ বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। পহেলা বৈশাখের ইতিহাস ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল যুগ থেকে শুরু হয় বলে মনে করা হয়, যখন সম্রাট আকবর ফসল কাটার মরশুমের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন কর ব্যবস্থা চালু করেন। এটি বাংলা নববর্ষের সঙ্গে মিলে যায়, যা ঐতিহ্যগতভাবে স্থানীয় জনগণের দ্বারা উদযাপন করা হয়।

নববর্ষ পালনের ক্ষেত্রে একেক দেশ একেক রীতি পালন করে থাকে। নতুন বছরের প্রথম দিন পালনে অনেক দেশে আজব কিছু রীতিও রয়েছে। যেসব দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়, তারা সাধারণত ১ জানুয়ারিতে নববর্ষ পালন করে। এ দিন অতীতের দুঃখ-গ্লানি ধুয়ে-মুছে নতুনভাবে জীবন শুরু করার স্বপ্ন রচনা করেন সবাই। সেই প্রাণাবেগই যেন ধরা পড়ে নববর্ষ পালনের বহুমাত্রিক আয়োজনে।


বিজ্ঞাপন


চলুন জেনে নিই বিভিন্ন দেশের বর্ষবরণের ইতিহাস ও যেভাবে পালিত হয় নতুন বছর—

গ্রেগরিয়ান নববর্ষ

রোমান ক্যালেন্ডারে নতুন বছর শুরু হতো ১ মার্চ থেকে। ল্যাটিন ভাষায় সেপ্টেম্বরের অর্থ সাত, অক্টোবর আট, নভেম্বর নয় এবং ডিসেম্বর দশ। সে সময় রোমান সরকারের নতুন অধিবেশন শুরু হতো জানুয়ারি মাস থেকে। জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৭ সালে এ ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের সৃষ্টি করেন। এতে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ সালে মার্ক অ্যান্টোনির কনসুল এক দফা পরিবর্তন করার পর খ্রিষ্টপূর্ব ৮ সালে এম্পরর অপাসটাস সিজার আরেক দফা পরিবর্তন করেন। সর্বশেষ পোপ ১৩তম গ্রেগরি ১৫৮২ সালে এই ক্যালেন্ডারে পরিবর্তন করে বর্তমান কাঠামোতে নিয়ে আসেন। এই পরিবর্তিত ক্যালেন্ডারে নতুন বর্ষের শুরু হয় ১ জানুয়ারি। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনটি মধ্যযুগে ধর্মীয় দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বাংলাদেশ


বিজ্ঞাপন


আকবর মুঘল ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন, যা ছিল ইসলামি ও হিন্দু ক্যালেন্ডারের সমন্বয়। বাংলা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে আর্থিক বছর মিলিয়ে দেওয়ার আকবরের সিদ্ধান্ত পরবর্তীকালে উৎসবে পরিণত হয়। প্রথমে আকবরের পঞ্জিকার নাম ছিল 'তারিখ-এ-এলাহি'। এই পঞ্জিকায় মাসগুলো ছিল আর্বাদিন, কার্দিন, বিসুয়া, তীর এমন নামে। সেটিই পরবর্তীতে বাংলায় বঙ্গাব্দ রূপে চালু হয়। আকবরের এই ‘তারিখ ইলাহি’র প্রবর্তনকাল ছিল ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ। তবে ঠিক কখন যে এই নাম পরিবর্তন হয়ে বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ হল তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। মনে করা হয় বাংলা বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্র থেকে। যেমন বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ, আষাড়া নক্ষত্র থেকে আষাঢ়, শ্রবনা নক্ষত্র থেকে শ্রাবণ, ভাদ্রপদ থেকে ভাদ্র, অশ্বিনী থেকে আশ্বিন, কৃত্তিকা থেকে কার্তিক, মৃগশিরা থেকে অগ্রহায়ণ, পুষ্যা থেকে পৌষ, মঘা থেকে মাঘ, ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন ও চিত্রা থেকে চৈত্র। বিশাখা নক্ষত্র অনুসারে বৈশাখ বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস, সেই হিসেবে বৈশাখের প্রথমদিন নববর্ষ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ ধরা হয়।

আকবরের আমলে প্রত্যেকে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে বাধ্য থাকত। এর পরের দিন পহেলা বৈশাখে জমিদাররা প্রজাদের মিষ্টান্ন বিতরণ করতেন, আপ্যায়ন করতেন। সব মিলিয়ে একটা গোটা উৎসবের সূচনা হয়ে যায় সেই সময় থেকেই। হালখাতার প্রচলনও সম্রাট আকবরের সময় থেকেই। জমি, কৃষিকাজ, খাজনা ও ব্যবসার হিসেব করার জন্য শুরু হয় হালখাতার প্রথা। হাল মানে নতুন, হালখাতা অর্থাৎ নতুন খাতা। পুরনো খাতা সরিয়ে নতুন খাতায় হিসেব নিকেশ লেখা হয়।

তবে পহেলা বৈশাখের উৎপত্তি নিয়ে অন্য মতও আছে। অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন, গৌড়বঙ্গের রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালে বঙ্গাব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে কর্ণসুবর্ণর সিংহাসনে বসেন শশাঙ্ক। সেই রাজ্যাভিষেকের বছর থেকেই অব্দ বা বৎসর গণনা করা হয়, সেটাই আসলে বঙ্গাব্দ।

পহেলা বৈশাখ সারা বিশ্বে বাঙালিরা অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করেন। দিনটি শুরু হয় খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার মধ্যে দিয়ে। এরপর স্নান সেরে নতুন জামাকাপড় পরে প্রার্থনা করা হয় আগামী বছরের সমৃদ্ধি এবং সুখের জন্য। ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা করেন, বিকেলে হালখাতার উৎসব হয়। পহেলা বৈশাখের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হল ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার। যার মধ্যে রয়েছে নানা রকমের, নানা স্বাদের মিষ্টি।

নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামাকাপড় পড়ে এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বাড়িঘর পরিষ্কার করা হয় এবং মোটামুটি সুন্দর করে সাজানো হয়। বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায়, কোন খোলা মাঠে আয়োজন করা হয় বৈশাখী মেলার।

মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানারকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে থাকে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তির। বাংলাদেশে এরকম কুস্তির সবচেয়ে বড় আসরটি হয় ১২ বৈশাখ, চট্টগ্রাম-এর লালদিঘী ময়দান-এ। এটি জব্বারের বলি খেলা নামে পরিচিত। এখন সর্বজনীনভাবে পালিত হচ্ছে এই দিনটি। দিনটি উপলক্ষে রয়েছে বিভিন্ন আয়োজন এবং দিনটিকে বাংলাদেশিরা খুব আপন করে নিয়েছেন।

তবে ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষকেও পালন করা হয়। এ উৎসব অনেকটা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক পালিত হয়।

শ্রীলঙ্কা

সিনহালা নববর্ষকে স্থানীয়ভাবে আলুথ আবুরুদ্ধাও বলা হয়। মূলত সিনহালিজদের উৎসব হলেও দেশটির সকল মানুষ উদযাপনে সামিল হন। দিনটিতে শ্রীলঙ্কায় সরকারি ছুটি থাকে। শ্রীলংকার এই নববর্ষ ১৪ই এপ্রিল পালন করা হয়। তবে উৎসব চলে এক সপ্তাহ ধরে। এ উৎসবটিও সৌর পঞ্জিকা অনুসারে পালন করা হয়, কিন্তু ঠিক কোন দিনে পালন করা হবে দিনটি সেটি নির্ধারণ করা হয় নতুন চাঁদের হিসাবে।

সিনহালা নববর্ষের সাথে তামিল নববর্ষের উদযাপনে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। উৎসবে নানা রকম পিঠা, মিষ্টি আর পায়েস বানানো হয়। এতে নাগরিক আয়োজনের চাইতে লোকজ বিভিন্ন খেলাধুলা আর প্রতিযোগিতার আয়োজন বেশি দেখা যায়। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য খেলাধুলার মধ্যে রয়েছে গরুর দৌড়, ডিম খেলা-এতে হাওয়ায় ছুড়ে দেয়া ডিম লুফে নেয়ার প্রতিযোগিতা হয়, ফসলি মাঠে কাদা খেলা ইত্যাদি।

ভারত

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু তারও বহু বছর আগে থেকে পঞ্জিকা দেখে যেসব দিন আর ক্ষণ উদযাপন হত, সেগুলো এখনো দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে পালন করা দেশটির সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। ভারতে সম্রাট আকবরের সময় যে নওরোজ উৎসব হতো তা সর্বভারতীয় উৎসবের মর্যাদা পায়নি। অনেকে ভারতীয় বর্ষবরণ উৎসবকে দিওয়ালী উৎসব বলে অভিহিত করেন। এটি হয় বিভিন্ন রাজ্য বা সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী।

ভারতের কয়েকটি রাজ্যে বৈশাখ মাসের প্রথম দিন নববর্ষ উদযাপন করা হয়। হিন্দু সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, মনিপুর, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন হয় বৈশাখের প্রথম দিন। পাঞ্জাব— বৈশাখী, কেরালা— ভিষু, আসাম— বিহু, তামিল নাড়ু— পুথান্দু, উড়িষ্যা— পান সংক্রান্তি, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা— পহেলা বৈশাখ।

তবে বর্তমানে ইংরেজি নববর্ষ পালন সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান।

নেপাল

নেপালে চন্দ্রবর্ষের প্রথম দিন উদযাপন করা হয়, যার নাম সোনাম লহসার। সেদিন দেশটিতে সরকারি ছুটি থাকে। চন্দ্র নববর্ষ উদযাপনের সময় নেপালি তামাং সম্প্রদায়ের লোকেরা ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজায়।

১৪ এপ্রিল নেপালের আনুষ্ঠানিক বর্ষ পঞ্জিকা বিক্রম সাম্বাতের প্রথম দিন। সৌর পঞ্জিকা, যা মূলত প্রাচীন হিন্দু রীতি অনুযায়ী তৈরি করা হয়, তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় কোন দিনে পালন হবে উৎসব। তবে সাধারণত ১৪ এপ্রিলেই হয় উৎসবটি। এ দিনে নেপালে নববর্ষ উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকে। এ দিনে বৈশাখ উৎসব নামে সার্বজনীন এক উৎসব হয় দেশজুড়ে। বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি হয় দিনটিতে, উৎসবের আমেজে ভালো খাওয়া-দাওয়া, শুভেচ্ছা বিনিময় আর নানা খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যে নতুন বছরে মধ্যরাতের পর যে পুরুষ প্রথম বাড়িতে পা দেয়, বলা হয় সে বাড়িতে সৌভাগ্য নিয়ে আসে। এ সময় পুরুষরা নিজেদের বাড়িতে টাকা, রুটি, কয়লা এবং অন্যান্য সামগ্রী উপহার হিসেবে নিয়ে আসে, যাতে সারা বছর পরিবারের সদস্যদের এ সব জিনিসের কমতি না হয়। মধ্যরাতের পর বাড়িতে পা দেয়া প্রথম মানুষটি অবশ্যই সোনালি বা লাল চুলওয়ালা এবং মহিলা হতে পারবে না। এতে বাড়িতে দুর্ভাগ্য আসে। লন্ডনে নববর্ষের আগ মুহূর্তে ট্রাফালগার স্কোয়ার এবং পিকাডেলি সার্কাসে বিশাল পরিসরে মানুষ সমবেত হয়। মধ্যরাতে বিগবেনের ধ্বনি শুনে এরা একত্রে নববর্ষকে বরণ করে নেয়।

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের নববর্ষ উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু হয় টাইমস স্কোয়ার। এখানে নতুন বছর শুরু হওয়ার ১০ সেকেন্ড আগে এক বিশালাকার ক্রিস্টাল বল নেমে নতুন বর্ষের আগমনের কাউন্টডাউন শুরু করে। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় নিউ-ইয়ার পার্টি। এতে প্রায় ৩০ লাখ লোক অংশগ্রহণ করে।

ফ্রান্স

ফ্রান্সে বছরের শেষ দিনে ঘরে থাকা সব মদ শেষ করতেই হবে। নতুন বছরে ঘরে পুরনো মদ পড়ে থাকা অশুভ। সৌভাগ্য ঘরে আসবে না। তবে ঘরে-থাকা মদ ফেলে দিলে চলবে না। খেয়েই শেষ করতে হবে৷। মদে মশগুল রাত, নতুন ভোর!

প্যারাগুয়ে

প্যারাগুয়ে বছরের শেষ পাঁচদিন তাদের ঘরে কোনো আগুন জ্বলে না। হয় না কোনো রান্না। ওই পাঁচদিনকে তারা পালন করে ‘ঠান্ডা খাবার খাওয়ার দিন’ হিসেবে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার পর নতুন বছরের ঘণ্টা বাজলে হেঁসেলে আগুন জ্বেলে নতুন নতুন পদ, একসঙ্গে খেয়ে নতুন বছরে পা দেন তারা।

পোল্যান্ড

পোল্যান্ডেও বর্ষবরণটা বেশ মজার। এখানকার তরুণীরা বর্ষবরণের রাতে খরগোশের মতো পোশাক পরে জড়ো হয়। এরপর খরগোশের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি জোগাড় করে। তারপর ওই শাক-সবজির যতটা সম্ভব চিবিয়ে খায়! শাকসবজি খেয়ে নতুন বছরে পা দিলে নাকি নতুন বছরের দিন সুন্দর হবে।

বুলগেরিয়া

বুলগেরিয়ায় বর্ষবরণের দিন হাঁচি দেয়া বেশ মঙ্গলের। বর্ষবরণের দিন তাদের বাড়িতে আসা কোনো অতিথি যদি হাঁচি দেন, তাহলে বাড়ির কর্তা তাকে নিজের খামারে নিয়ে যান। এরপর ওই ব্যক্তির প্রথম নজর যে পশুর ওপর পড়বে, সেই পশুটি ওই ব্যক্তিকে উপহার দেয়া হয়।

হাঙ্গেরি

বছরের শেষ দিন হাঙ্গেরিবাসী হাঁস, মুরগি বা কোনো ধরনের পাখির মাংস খান না। উড়তে পারে এমন পাখির মাংস খেলে নতুন বছরে জীবন থেকে সব সৌভাগ্য উড়ে যাবে! তারা নতুন বছরে পরিচিত বা বন্ধুদের যে উপহার দেন, তাতে চিমনি পরিষ্কার করছেন এমন একজন শ্রমিকের ছবি থাকে। উপহারে এই ছবিটি থাকলে পুরনো বছরের সমস্ত দুঃখ নতুন বছরে মুছে যাবে।

ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামের উত্তরের সংখ্যালঘু জাতি বছরের শেষদিনে প্রতিদিন জল সংগ্রহ করার জলাধারে দলবেঁধে গিয়ে মোমবাতি জ্বেলে মাটিতে মাথা ছুঁইয়ে প্রণাম করে এক কলস জল নিয়ে আসে। এরপর ওই জল দিয়ে বছরের প্রথম দিন রান্না করে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে উৎসর্গ করার পর নিজেরা খায়। বছরের প্রথম দিনে স্যুপ জাতীয় খাবার থাকে না। এছাড়া অনেকে নদী বা পুকুরে কার্প মাছ ছাড়েন।

থাইল্যান্ড

থাইল্যান্ডের নতুন বছরের শুরুর দিনটি সংক্রান উৎসব নামে পরিচিত। সংক্রান শব্দটি সংস্কৃত ভাষার শব্দ সংক্রান্তি থেকে এসেছে। থাইল্যান্ডে মূলত এটি এপ্রিলের ১৩ তারিখে শুরু হয়, কিন্তু এ উৎসব চলে ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত। ২০১৮ সালে থাই সরকার উৎসবের দৈর্ঘ্য ১২ই এপ্রিল থেকে ১৬ই এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করেছে। এ সময়ে দেশটির সাধারণ ছুটি থাকে। থাই এবং মালয়েশিয়ান সিয়ামিজ গোত্রের মানুষেরাই মূলত ধর্মীয় রীতি মেনে এ উৎসব পালন করেন, কিন্তু উদযাপন হয় দেশজুড়ে। নববর্ষে থাইল্যান্ডে সবচেয়ে বড় আয়োজন থাকে পানি উৎসব। দিনভর সব বয়সের সব শ্রেণীর মানুষ অংশ নেন তাতে।

আফ্রিকা

আফ্রিকার মাদাগাস্কারে নতুন বছর শুরুর সাতদিন আগে থেকে মাংস খাওয়া বন্ধ। বছরে প্রথম দিন বাড়িতে মুরগির মাংস রান্না হবে। প্রথমে তা খেতে দেয়া হবে বাবা-মাকে। বাবা-মাকে খেতে দেয়া হয় মুরগির লেজের দিকের অংশটা। আর ভাই-বোনদের দেয়া হয় মুরগির পা।

অস্ট্রেলিয়া

সিডনিতে নববর্ষ উপলক্ষে প্রায় ৮০ হাজার আতশবাজি ফোটানো হয় যা ১৫ লাখ লোক উপভোগ করে।

স্কটল্যান্ড

এ সময় সবাই নিজেদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে নতুন বছরের আগমনের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় জুনিপার গাছের ডাল পোড়ানো হয়। নববর্ষের দিন যে মানুষ প্রথম বাড়িতে পা রাখে সে-ই ওই বছর বাড়ির সদস্যদের ভাগ্য নির্ধারণ করে। স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় যে নববর্ষ উৎসব হয় তা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। চার দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে মানুষ আসে।

রাশিয়া

গ্রান্ডাফাডার ফ্রস্ট, যে সান্টাক্লসের লালের পরিবর্তে নীল স্যুট পরে, এ দিন শিশুদের মধ্যে খেলনা বিতরণ করে।

জার্মানি

এখানে মানুষ ঠান্ডা পানির মধ্যে তরল সিসার টুকরা ঠেলে দেয়। সিসার টুকরা যে রকম আকার বানায় তা দেখে ভবিষ্যৎ নির্ণয় করা হয়। নববর্ষের আগে খাওয়া খাবারের কিছু অংশ মধ্যরাতের জন্য রেখে দেয়া হয়, যাতে করে নতুন বছর ঘরে পর্যাপ্ত খাবার থাকে।

চীন

পূর্ণিমার শুরুর দিন থেকে শুক্লপক্ষের পনেরো দিন উৎসব চলে নববর্ষ উপলক্ষে। চীনারা নববর্ষ পালন করে প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী। নববর্ষের প্রথম দিনে তারা স্বর্গ ও পৃথিবীর দেবতাকে তুষ্ট করে নানা উপাসনা-উপাচারে, দ্বিতীয় দিন পূর্বপুরুষের মঙ্গল কামনা করে। ‘ওয়েইলু’ নামক বিশেষ ভোজনের আয়োজন করা হয় এ দিন। পক্ষব্যাপী আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানের মধ্যে সপ্তম দিনটি পালিত হয় ‘শস্য দিবস’ নামে।

জাপান

জাপানে নববর্ষের সময় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। খারাপ আত্মাকে দূরে রাখার জন্য এ সময় বাড়ির বাইরে দড়ি দিয়ে খড়ের টুকরো ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এটাকে তারা সুখ এবং সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখে। নতুন বর্ষ শুরু হওয়ার সাথে সাথে জাপানিরা হাসা শুরু করে, এতে নতুন বছর সৌভাগ্য নিয়ে আসে।

আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনায় নববর্ষের আগের দিন রাত্রে পরিবারের সবাই একত্রে খাবার টেবিলে বসে আহার করে। ভোর পর্যন্ত চলে নানা অনুষ্ঠান। নববর্ষের প্রথম দিন নদী বা পুকুরে সাঁতার কেটে তারা নববর্ষ উদযাপন করে।

ব্রাজিল

ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো সমুদ্রসৈকতে নববর্ষের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হয়। এর অন্যতম আকর্ষণ চোখ ধাঁধানো আতশবাজির প্রদর্শনী। এ দিন অনেকেই সাদা পোশাক পরে। সমুদ্রে সাতটি ডুব দিলে এবং সাতটি ফুল ছুড়ে দিয়ে তারা মনে করে বছরটি খুব ভালো কাটবে। এ উৎসবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় দুই মিলিয়ন পর্যটক যোগ দেয়।

কোরিয়া

কোরিয়াতে নববর্ষ শুরুর সময় কেউ ঘুমায় না। এ সময় ঘুমালে নাকি চোখের ভ্রূ সাদা হয়ে যায়! রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে টিভিতে ৩৩ বার ঘণ্টা বাজানো হয়। কোরিয়ার ৩৩ বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এটি করা হয়। কোরিয়াতে প্রায় সবাই সূর্যোদয় দেখে। সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ার সময় একজন আরেকজনকে শুভেচ্ছা জানায়।

মিয়ানমার

মিয়ানমারের নববর্ষকে স্থানীয়ভাবে থিংইয়ান নামে ডাকা হয়। বার্মিজ ভাষায় এর অর্থ ‘পরিবর্তন’ বা ‘এক জায়গা থেকে অন্যত্র স্থানান্তর’। নতুন বছরের প্রথম দিনটি সাধারণত মধ্য-এপ্রিলে হয়ে থাকে, তবে ঠিক কোন নির্দিষ্ট দিনে তা পালন হবে তা হিসাব করা হয় মিয়ানমারের সৌর এবং চন্দ্র পঞ্জিকার গণনা মিলিয়ে। থিংইয়ানের দিনে বার্মা বা মিয়ানমার জুড়ে পানি উৎসব হয়, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পানি উৎসবের একটি। দেশটির মানুষ ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে পালন করে আসছে এ উৎসব। নববর্ষের চারদিন আগে থেকে পানি উৎসব শুরু হয়, চলে নববর্ষের দিন পর্যন্ত। দেশটির মানুষের বিশ্বাস, পানি উৎসবের পানির ছোঁয়া লাগতে হবে সব মানুষের গায়ে, তাতে করে সব পাপ দূর হয়ে যাবে। এপ্রিলে মিয়ানমারের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে, যে কারণে পানি উৎসবের কারণে লোকের কষ্টের চেয়ে বরং এক ধরণের শান্তি হয়।

মেক্সিকো

মেক্সিকোতেও ১২টা বাজার সাথে সাথে ১২ বার ঘণ্টা বাজানো হয়। এ সময় প্রতি ঘণ্টা ধ্বনির সাথে একটি করে আঙুর খাওয়া হয়। তারা বিশ্বাস করে এ সময় যা কামনা করা হয়, তাই পূরণ হয়।

লাওস

লাওস, উত্তর-পূর্ব-মধ্য মূল ভূখণ্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ল্যান্ডলকড দেশ। এটি উত্তরে একটি অনিয়মিতভাবে বৃত্তাকার অংশ নিয়ে গঠিত যা দক্ষিণ-পূর্বে প্রসারিত একটি উপদ্বীপের মতো অঞ্চলে সঙ্কুচিত। লাওসেও সৌর পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখের প্রথম দিনটি পালন করা হয়। স্থানীয়ভাবে এর নাম সংক্রান বা পি-মেই, যার মানে নতুন সংক্রান্তি বা নতুন বছর। দেশটিতে তিন দিন ধরে চলে উৎসব আনুষ্ঠানিকতা।

কম্বোডিয়া

কম্বোডিয়াতে ১৪ই এপ্রিল খেমার নববর্ষ পালন করা হয়। দেশটিতে দিনটিকে বলা হয় ‘চউল সানাম থামাই’, এর মানে নতুন বছরে প্রবেশ করা। উৎসবের শুরু হয় বৌদ্ধ মন্দিরে সকাল বেলায় ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর প্যাগোডা বা বৌদ্ধমন্দির চত্বরে ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মাধ্যমে নতুন বছরের স্বাগত জানাতে শুরু করেন অধিবাসীরা। খেমার নববর্ষে কম্বোডিয়াতে নানা ধরণের লোকজ খেলা এবং প্রতিযোগিতা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রশি বা দড়ি টানাটানি খেলা হয়, অধিকাংশ এলাকায় নারী বনাম পুরুষের মধ্যে হয় এই খেলা। তাতে অংশ নেন বাচ্চা-বুড়ো সবাই।

এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর