ভারতে পাশ হয়েছে ওয়াকফ সংশোধনী আইন। এরপর গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পার্ক সার্কাস সাতমাথার দখল নিয়ে প্রতিবাদ করেছিল একাধিক মুসলিম সংগঠন। আর তা ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের অন্যান্য সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতেও। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ‘দিদি’ হিসাবে তিনি মুসলিমদেরও পাশে থাকবেন এবং তাদের সম্পত্তি রক্ষা করবেন।
বুধবার (৯ এপ্রিল) নেতাজি ইন্ডোরের একটি সভা থেকে তিনি এ কথা জানান বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) মহাবীরজয়ন্তী। সেই উপলক্ষে জৈন সম্প্রদায়ের উদ্যোগে এই ‘নবকার মহামন্ত্র দিবস’ উদ্যাপিত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি জানি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সংখ্যালঘুদের মনে একটা দুঃখ আছে। আপানারা ভরসা রাখুন, বাংলায় এমন কিছু হবে না যাতে বিভাজন হয়। সবাইকে একসঙ্গে থেকে বাঁচতে হবে। জিও, জিনে দো (বাঁচুন, বাঁচতে দিন)।’
পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সবাই একসঙ্গে বাঁচার কথা বলুন। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্ররোচনা দেয়। আমি বলছি, দিদি আছে, দিদি আপনাদের রক্ষা করবে। আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। কেউ উস্কানিতে পা দেবেন না।’
এদিকে, ওয়াকফ বিল সংসদে পাশ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাতে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এরপর আইনের গেজেটও হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
নতুন আইন নিয়ে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘সমগ্র সমাজের স্বার্থে, মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থে এই চমৎকার আইন (ওয়াকফ আইন) প্রণয়নের জন্য আমি দেশের সংসদকে অভিনন্দন জানাই। এখন ওয়াকফের পবিত্র চেতনা সুরক্ষিত হবে। মুসলিমদের অধিকারও সুরক্ষিত হবে এই আইনের ফলে।’
কংগ্রেসসহ বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মোদী বলেছেন, ‘তোষণের রাজনীতি নতুন নয়। স্বাধীনতার সময়ই এই তোষণের বীজ বপন করা হয়েছিল। দ্বি-জাতি তত্ত্ব সাধারণ মুসলিমদের সিদ্ধান্ত ছিল না। তোষণের রাজনীতির মাধ্যমেই কংগ্রেস ক্ষমতা পেয়েছে। কিছু মৌলবাদী নেতা সম্পদ পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সাধারণ মুসলিমরা কী পেয়েছেন? গরিব মুসলিমরা কী পেলেন?’
আরও পড়ুন
এদিকে, ওয়াকফ আইন অসংবিধানিক —এই অভিযোগ করে ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে কংগ্রেস।
স্বাধীনতার সময়ের প্রসঙ্গ টেনে এনে বুধবার (৯ এপ্রিল) মমতা বলেন, ‘বিভাজন তো আমরা করিনি। সেই স্বাধীনতার সময়ে হয়েছে। কেউ কেউ আপনাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে উস্কানি দিচ্ছে। তাতে পা দেবেন না।’
ভোটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১৪ বছর ধরে বাংলায় সংখ্যালঘুদের একটচেটিয়া সমর্থন রয়েছে তৃণমূলে। আর তা ইতোমধ্যে মমতার দলের রাজনৈতিক পুঁজিতেও পরিণত হয়েছে। বিজেপি প্রায়ই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সংখ্যালঘু তোষণের’ অভিযোগ তোলে।
মমতা তা উড়িয়ে দিতে চেয়ে বলেছেন, ‘এখানে (বাংলায়) ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। আমরা কী করব, তাদের বার করে দেব?’
ওয়াকফ নিয়ে যে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন হয়েছিল, তাতে ক্রমাগত তৃণমূল বিরোধিতা করে গিয়েছে। আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে ওয়াকফকে ‘হাতিয়ার’ করে তৃণমূল যে সংখ্যালঘুদের ‘ভরসার বার্তা’ দিতে চাইবে, তা নানা ভাবেই স্পষ্ট হচ্ছিল। বুধবার (৯ এপ্রিল) মমতা নিজেই বলে দিলেন, ‘দিদি’ রক্ষা করবে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি।
এমএইচটি

