এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠক আয়োজনের অনুরোধের পর তিনটি বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এ তথ্য তুলে ধরে হিন্দুস্তান টাইমস।
শুক্রবার (২১ মার্চ) ‘ফরমাল মোদি-ইউনূস মিট আনলাইকলি অ্যাট বিমসটেক সামিট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানায় ভারতীয় গণমাধ্যমটি। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদি ও ড. ইউনূসের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক আয়োজনের জন্য ভারতকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরপরই দিল্লির অনাগ্রহের বিষয়টি জানালো হিন্দুস্তান টাইমস।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত তিন সূত্র জানিয়েছে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বৈঠকের জন্য অনুকূল নয়। বিশেষ করে সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং তিক্ততার কারণে এই ধরনের বৈঠকের জন্য এখনও কোনো ভিত্তি প্রস্তুত করা হয়নি।
তারা বলছেন, বিমসটেক সম্মেলনে মোদি ও ড. ইউনূসের মধ্যে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ বা শুভেচ্ছা বিনিময় হতে পারে। শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সব নেতাই এটা একে অপরের সঙ্গে করে থাকেন। তবে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যাচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
একটি সূত্র হিন্দুস্তান টাইমসকে জানায়, একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করা কঠিন বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে যখন ঢাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো কোনো সদস্য প্রায় প্রতিদিনই ভারতের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ তুলেছেন। তাই এই পরিস্থিতি বৈঠকের জন্য উপযুক্ত নয়।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন তথা বিমসটেক এর শীর্ষ সম্মেলন ব্যাংককে এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন নয়াদিল্লি এবং ঢাকার মধ্যে সম্পর্ক সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং কারাগার থেকে সহিংস উগ্রপন্থীদের মুক্তির বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে উপস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ রয়েছে, যার জন্য তারা প্রত্যর্পণের অনুরোধ জমা দিয়েছে এবং সীমান্তবর্তী নদীগুলির জল বণ্টন এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে বেড়া দেওয়ার মতো বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নয়াদিল্লিতে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা মহলে আরেকটি বিষয় ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়নি, তা হলো ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) সহ পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততা।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে গুম এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশে একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামি থাকা শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশের অনুরোধে ভারত এখনও সাড়া দেয়নি। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা আছে।
ইএ