শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

চীনের ‘নতুন দুঃখ’ ধূলিঝড়

তাসীন মল্লিক
প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

চীনের ‘নতুন দুঃখ’ ধূলিঝড়

জলসংরক্ষণ প্রকল্প আর শক্ত বাঁধ নির্মাণ করে নিজেদের পুরনো দুঃখ হোয়াংহোকে কব্জা করেছিল চীন। ২৬ বার নিজের গতি পথ পরিবর্তন করে চীনের সভ্যাতাকে হুমকির মুখে ফেলেছিল এই নদী। হোয়াংহো চলে গেলেও ফিরে এসেছে নতুন আরেক ‘দুঃখ’। এই নতুন সংকট হলো ধূলিঝড়।

১২ প্রদেশে একযোগে তাণ্ডব চালানো ঝড়ে ৬ জন নিহত হয়। হলুদাভ রঙ ধারণ করা প্রকৃতিতে হারিয়ে যান প্রায় ৩৪১ জন।

 

বিশ বছরে দুটি সুপার স্যান্ডস্টর্মের মুখোমুখি হয়েছে চীন। তার মধ্যে গত বছরের ধূলিঝড়টি ছিল সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী। এছাড়া প্রতি বছরের প্রারম্ভে ছোটখাটো ধূলিঝড়ের সম্মুখীন হচ্ছে দেশটি।

২০২১ এর মার্চের ধূলিঝড়টিতে বাদামি ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চীনের রাজধানী বেইজিং। বাতাসে নিশ্বাসযোগ্য কণার উপস্থিতির হার দাড়ায় ৫০০ মাইক্রোগ্রামে, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত সীমা সর্বোচ্চ ২৫ মাইক্রোগ্রাম।

ধূলিঝড়ের প্রকোপে দিনের বেলাও হেড লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালিয়েছিল চীনের নাগরিকরা। ১২ প্রদেশে একযোগে তাণ্ডব চালানো ঝড়ে ৬ জন নিহত হয়। হলুদাভ রঙ ধারণ করা প্রকৃতিতে হারিয়ে যান প্রায় ৩৪১ জন।


বিজ্ঞাপন


আগ্রাসী বোরিয়াস

গ্রীক পুরান অনুযায়ী উত্তরের বাতাসের মূর্ত রূপ বোরিয়াস। বছরের শুরুতে মঙ্গোলিয়ার মরু অঞ্চল পাড়ি দেওয়ার সময় এমন আগ্রাসী হয়ে ওঠেন ভীষণ প্রেমিক এ দেবতা। ক্রমশ দক্ষিণে বয়ে নিয়ে চলেন মরুর ধূলিদেরও।

প্রবল ধূলিঝড়ে হলুদাভ রূপ ধারণ করেছে চীনের প্রকৃতি

আয়তনে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ দেশ চীনের এক তৃতীয়াংশই এই ধূলিঝড়ের ক্রোধের কবলে পড়ে। গোটা অঞ্চল ঢেকে যায় ধূলায়। মঙ্গোলিয়ার নিকটবর্তী গানসু থেকে মধ্যবর্তী হুবেই পর্যন্ত বিস্তৃত হয় ধূলা সমৃদ্ধ বাতাস। উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার জনগণকে ভোগ করতে হয় বোরিয়াসের অভিশাপ। ধূলিঝড় স্থায়ী হয় কয়েকদিন পর্যন্ত।

অ্যাটমোসফিয়ারিক এনভায়রনমেন্ট (এই) এশীয় অঞ্চলের গবেষকদের মতে, শীতকালে উত্তর চীনে বাতাসের তাপমাত্রা এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে ধূলিঝড়ের সম্ভাবনা।

এই-এশিয়ার গবেষণায় দেখা যায়, ধূলিকণার উৎস এলাকা মঙ্গোলিয়ায় পৃষ্ঠ বায়ুর তাপমাত্রা (SAT) ক্রমাগতভাবে কমেছিল। ফলে হিমায়িত ভূপৃষ্ঠ স্পষ্টতই শিথিল হয়। ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির প্রথমার্ধের পর উষঢ় অঞ্চলটির তাপমাত্রা আবার নাটকীয়ভাবে বাড়তে থাকে। পূর্ব থেকেই শিথিল ভূপৃষ্ঠে হঠাৎ উষ্ণায়নের ফলে মারাত্মক মরুকরণ ঘটে। ধূলিঝড়ের জন্য অনুকূল হয়ে ওঠে অঞ্চলটি।

দায়ী জলবায়ুর অসঙ্গতি

জলবায়ুর অসঙ্গতিই দুই দশক ধরে বার বার হানা দেয়া ধূলিঝড়ের জন্য দায়ী। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করে চীনের উত্তরাঞ্চলে বন নিধন ও মাটি ক্ষয় থেকে এ ধূলিঝড়।

পৃথিবীর সমগ্র কার্বন নির্গমনের এক চতুর্থাংশই ঘটে থাকে চীনের মাধ্যমে। দেশটির মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ ৮ দশমিক ১ টন। ইতোমধ্যে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হারের চেয়ে চীনে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বেশি।

উচ্চ কার্বন নির্গমন চীনের জলবায়ুকে উদ্বেগজনক পরিবর্তনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই-এশিয়ার গবেষণা বলছে, ১৯৯০ এর দশকের পর আধুনিক চীনের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া জলবায়ুর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। 

ধূলিঝড়ের জন্য দিনের বেলাও হেড লাইট জ্বালিয়ে চালাতে হয় গাড়ি

খোদ চীনা সরকারও বিশ্বাস করে, উষ্ণ তাপমাত্রার জন্যই চলতি শতাব্দীতে ধূলিঝড়, অতিবৃষ্টিসহ ভয়াবহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে দেশটিকে। সবকিছু স্বীকার করে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) দেশটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কার্বন নিঃসরণ কমানোর।

মরুঝড় ঠেকাতে গোবী মরুভূমি অঞ্চলে কৃত্রিম বনায়ন শুরু করেছে দেশটি।

সূত্র:

  • Regional characteristics of dust storms in China , Department of Atmospheric Sciences, Monsoon and Environment Reseach Group, School of Physics, Peking University, Beijing 100871, China.
  • globaltimes.cn
  • xinhua

টিএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর