গাজার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর রোববার সকালে প্রথম ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফিলিস্তিনি অঞ্চলে জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থার (ওসিএইচএ) অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান জোনাথন হুইটল বলেছেন, রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ত্রাণবাহী ট্রাকের প্রথম বহর গাজায় ঢুকতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী অংশীদারদের পক্ষ থেকে সমগ্র গাজাজুড়ে ত্রাণ সরবরাহ এবং বিতরণের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো উত্তর দিকে জিকিম এবং দক্ষিণ দিকে কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করছে।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিশরের একটি সূত্র জানিয়েছে যে, ১৯৭টি ট্রাক ত্রাণ এবং পাঁচটি জ্বালানি বহনকারী ট্যাঙ্কার ইসরাইল ও গাজার মধ্যবর্তী কেরেম শালোম এবং মিশর ও ইসরাইলের মধ্যবর্তী আল-ওগা ও নিতজানা ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করেছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেল আত্তি এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুয়ায়ী প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে, যার মধ্যে ৫০টি ট্রাকে থাকবে জ্বালানি।
গাজায় প্রায় ১৫ মাস ধরে সামরিক আগ্রাসনকালে ঠিকমতো ত্রাণ প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরাইল। ফলে ভয়াবহ খাদ্য সংকট এমনকি কোথাও কোথাও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে অধিবাসীরা।
গত সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পর থেকে উপত্যকার সীমান্তে হাজার হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক ভেতরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজায় বিতরণের জন্য তাদের ১ হাজার ৩০০ ট্রাক ত্রাণ প্রস্তুত রয়েছে।
গাজার আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবির থেকে সংস্থাটির মুখপাত্র রোজালিয়া বোলেন শনিবার (১৮ জানুয়ারি) জানান, আমাদের ১ হাজার ৩০০ ট্রাক পণ্য আনার ব্যবস্থা হয়েছে। এরপর আরও ৭০০ ট্রাক পণ্য অল্প সময়েই নিয়ে আসা যাবে। তিনি আরও বলেন, এসব কেবল আমরা একা ব্যবস্থা করিনি। বরং এক্ষেত্রে অন্যান্য মানবিক কর্মীরাও আমাদের সরবরাহ করেছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক্স পোস্টে লিখেছে, প্রথমে যে ট্রাকগুলো প্রবেশ করতে শুরু করেছে তাতে গমের ময়দা এবং জরুরি খাদ্য সহায়তা রয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) রোববার জানিয়েছে, গাজায় প্রবেশের জন্য তাদের ৪ হাজার ট্রাক মানবিক সাহায্য প্রস্তুত রয়েছে, যার অর্ধেক চালানে রয়েছে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ ও আটা।
২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর গাজাবাসী অনেকটাই ত্রাণের উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৪০টি ত্রাণের ট্রাক গাজায় সহায়তা নিয়ে যেতো। যুদ্ধের শুরুর দিকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করত।
২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়, যেখানে প্রায় ১,২০০ মানুষ নিহত হয়। এ সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।
পরে ইসরায়েল গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে এখন পর্যন্ত ৪৬,৮০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এই হামলায়।
এফএ