শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ঢাকা

গাজার বোমার আগুন দাবানল হয়ে এসেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

গাজার বোমার আগুন দাবানল হয়ে এসেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে!

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে বিনোদনজগতের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহর। ঘরবাড়ি-অবকাঠামো পুড়ে এরই মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাতজন।

লস অ্যাঞ্জেলেস যখন আগুনে পুড়ছে ঠিক তেমনি আগুনে পুড়ছে সাড়ে পাঁচ হাজার মাইল দূরের আরেকটি শহর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। তবে সেটি পুড়ছে ইসরায়েলের টনকে টন বোমা হামলায়। এই বোমার সিংহভাগই সরবরাহ করে আমেরিকা। আর তাই এ নিয়ে আমেরিকান নাগরিকসহ অনেকের মধ্যে রব উঠেছে, ‘গাজার আগুন দাবানল হয়ে ফিরে এসেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে’। স্যোশাল মিডিয়ায় এ নিয়ে পোস্ট করেছেন অনেকেই।


বিজ্ঞাপন


মিডল ইস্ট আই, টাইমস অব ইসরায়েল এবং লন্ডনভিত্তিক দ্য নিউঅ্যারাব ডটকম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

los_angeles_fire_3
আগুনে পুড়ছে লসঅ্যাঞ্জেলেস

মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্যোশাল মিডিয়াগুলোতে অনেকে ভয়াবহ দাবানলে লস অ্যাঞ্জেলেসের ধ্বংস এবং বাস্তুচ্যুতির অভিজ্ঞতাকে গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে অনেকে এও বলছেন যে, গাজার সেই আগুন আমেরিকায় আমাদের বাড়িঘরে ফিরে এসেছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আমেরিকানরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসের ১৮ মিলিয়ন ডলার বাজেট কমিয়ে দেওয়া এবং ইসরায়েলের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেছেন।


বিজ্ঞাপন


ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আহমেদ এলদিন এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে বলেছেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার ডিপার্টমেন্টের বাজেট ১৭.৬ মিলিয়ন ডলার কমানো হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের জন্য মার্কিন বাজেট ২৩ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরায়েল আরও ৮ বিলিয়ন ডলার পেতে যাচ্ছে।

gaza_bombing_
গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বোমাবর্ষণ

 

বামপন্থী কর্মী গোষ্ঠী কোড পিঙ্ক তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বলেছে, ‘যখন মার্কিন ট্যাক্স গাজায় মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে, সেই আগুন যখন ঘরে ফিরে আসে তখন আমরা অবাক হই না।’

los_angeles_fire2
দাবানলের আগুনে পুড়ে ছাড়খার লসঅ্যাঞ্জেলেস শহর 

সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আগুনে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন বিনোদনজগতের আরও অনেকে। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। তাদেরই একজন হলিউড অভিনেতা জেমস উড। দাবানলের আগুনে পুড়ে গেছে তার মূল্যবান বাড়ি। জেমস উড গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের কট্টর সমর্থক। দাবানলে তিনি বাড়ি হারানোর প্রতিক্রিয়া জানানো পর মানুষজন পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তার আগের 
একটি পোস্ট প্রচার করেছেন যেখানে উডস বলেছেন, “কোনো যুদ্ধবিরতি নয়। নো কম্প্রোমাইজ। ক্ষমা নেই।” #KillThemAll" তথা তাদের সবাইকে হত্যা করো হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করেন তিনি।

গত বুধবার সিএনএনের সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় বাড়ির ধ্বংসের শোকে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন উডস। 

বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি কবি মোসাব আবু তোহা সোশ্যাল মিডিয়ায় উডসকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনি বাতাসে উঠে কান্নাকাটি করার সাহস কীভাবে করলেন?!"।

পুরস্কার বিজয়ী এই কবি এক্স হ্যান্ডেলে বলেন, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর আমাদের বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছিল, তখন আমার কাছে কোনো বাড়ি বা যাওয়ার জন্য নিরাপদ জায়গা ছিল না। আমি বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখতে ফিরে যেতে পারিনি। কারণ আমার শহর দখল করা হয়েছে।

mosab_abu_toha

উডসকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও লেখেন, ‘আমার বন্ধু মা'রউফ আল-আশকারকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হত্যা করা হয়েছিল। তার কণ্ঠ ছিল সুমধুর। তিনি রাশিয়ান সাহিত্য বিশেষ করে দস্তয়েভস্কির একজন আগ্রহী পাঠক ছিলেন। এটা কি আপনাকে বিরক্ত করে?’

মোসাব আরও জানান, তার খালার বাড়িতে ২০২৪ সালের অক্টোবরে বোমা হামলা করা হয়েছিল। তার খালাতো বোনসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয় সেই হামলায়। অনেকে এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে। এটি কি আপনার কাছে কিছু বোঝায়?"

আমেরিকায় অবস্থিত ইসরায়েলের দূতাবাস দাবানলে ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছে। সেখানে তারা লিখেছে- ‘আমাদের হৃদয় দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে আছে।  ইসরায়েল ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে।’ এটি শেয়ার করে সানা সাঈদ নামে একজন ফিলিস্তিনিদের তাঁবুতে জীবন্ত পুড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি ইসরায়েলিদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

sana_saeed

ইনস্টাগ্রামে যার ৩০ লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে ওমর সুলেমানের। উডসের ক্ষতির প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন: “প্রার্থনা করছি যে ঈশ্বর লস অ্যাঞ্জেলেস এবং তার বাইরের নিরপরাধ লোকদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করুন।” তিনি দুঃখ করে বলেন, কিন্তু এই সম্পদশালীরা গাজার জনগণকে নির্মূল করতে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়। আর নিজেদের প্রাসাদে অজেয় বোধ করেন। সেই প্রাসাদ আর নেই।

ইসরায়েল গাজায় যাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বলেছেন যে, তারা আগুনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘ঐশ্বরিক সতর্ক বার্তা’ হিসেবে দেখছেন। 

মাহমুদ বাসাম নামে এক্সে লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের হত্যা করার জন্য ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। কিন্তু আগুন (তাদের সাজা দিতে) ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে।
তিনি আরও লিখেছেন, তারা আমাদের দেশে যুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে, আমাদের শিশুদের হত্যা করেছে এবং আমাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। তারা ইসরায়েলকে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছাড়াই হত্যা ও ধ্বংস করার জন্য অস্ত্র সরবরাহ করেছিল। কিন্তু ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বর নিপীড়িতদের প্রার্থনা এবং মায়ের চোখের জল ভুলে যান না।

122

মাহমুদ আরও লিখেছেন, তাদের দেশে যে আগুন জ্বলেছে তা মানবসৃষ্ট নয়; এটা ঈশ্বরের কাছ থেকে। যারা অন্যায় ও অত্যাচার করার সাহস করে তাদের জন্য এটি একটি ঐশ্বরিক বার্তা, যে ঈশ্বরের ন্যায়বিচার সকলকে ছাড়িয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, ঈশ্বর অবকাশ দেন কিন্তু অবহেলা করেন না। এবং যে কেউ আমাদের দেশে আগুন জ্বালায় তাদের কাছে আগুন আসবে। যখন তারা এটির আশাও করে না।

নিউইয়র্কের মানবাধিকার কর্মী ও ইসরায়েলবিরোধী গ্রুপ উইন আওয়ার লাইফটাইমের নেতা ফাতিমা মোহাম্মদ আগুনের একটি ছবি পোস্ট করে বলেছেন, ‘গাজার আগুন সেখানে থামবে না।’
তিনি গাজায় টনকে টন বোমা হামলায় জলবায়ুর ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দাবানলের মতো বিষয়ের সৃষ্টি হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

fatima_mohammad
ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর